ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি সদর উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে উল্টে যাওয়া বাসের নিহত ১৭ যাত্রীর পরিচয় মিলেছে। স্বজনরা শনাক্তের পর মরদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে ঝালকাঠি সদর থানার সেকেন্ড অফিসার গৌতম ঘোষ জানান।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, ১৭ জনের মৃতদেহের স্বজনরা শনাক্ত করেছে। তা হস্তান্তর করা হয়েছে। যারা পোস্ট মর্টেম ছাড়া নিতে আবেদন করেছেন তাদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রেখে মরদেহ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে গিয়ে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। আহত অবস্থায় অন্তত ৩৫ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
বাসের যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা শহিকুল ইসলাম জানান, পুকুরটি প্রায় ৩০ ফুট গভীর হওয়ায় এত বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত এসে পাম্প লাগিয়ে পুকুরটি সেচ দিয়ে পানি কমিয়ে উদ্ধার করায় অনেককে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ তদন্তের পর জানা যাবে। এছাড়া সড়কের পাশে এমন গভীর পুকুর খনন যেন না করা হয় সেবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ মামুন শিবলীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসের ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে হেলপার আকাশ (১৭)কে পাওয়া গেছে।
নিহতরা হলেন-ভাণ্ডারিয়া পৌর এলাকার পান্না মিয়ার ছেলে তারেক রহমান (৪৫), একই এলাকার মুজাফফর আলীর ছেলে সালাম মোল্লা (৬০), রাজাপুর উপজেলার নিজামিয়া গ্রামের মৃত মাওলানা নজরুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম (৪৩), তার কন্যা খুশবো আক্তার (১৭), ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার মৃত সালাম মোল্লার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), ভাণ্ডারিয়ার পশারিবুনিয়া এলাকার জালাল হাওলাদারের কন্যা সুমাইয়া (৬), বাকেরগঞ্জের চর বোয়ালিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে আবদুল্লাহ (৮), ভাণ্ডারিয়া রিজার্ভ পুকুর পাড় এলাকার মৃত লাল মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম (৬০), মৃত লাল মিয়া হাওলাদারের ছেলে আবুল কালাম হাওলাদার, মেহেন্দিগঞ্জের মোর রিপনের কন্যা নিপা মনি (১), তার মা আইরিন আক্তার (২২), রাজাপুরের বলাইবাড়ি এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে নয়ন (১৬), ভাণ্ডারিয়ার উত্তর শিয়ালকাঠি এলাকার মৃত ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), কাঠালিয়ার বাঁশবুনিয়া এলাকার তৈয়বুর রহমানের কন্যা সালমা আক্তার মিতা (৪২), তেলিখালি এলাকার রাসেল সিকদারের স্ত্রী সাবিহা আক্তার (২৪), কাঠালিয়া উপজেলার দক্ষিণ কৈখালি গ্রামের ফারুক তালুকদার (৫০), বরিশালের হাটখোলা এলাকার কবির মোল্লার স্ত্রী পারভীন আক্তার (৫৩)।
এছাড়া ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের নাম পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- কাঁঠালিয়ার আবুল বাশার, রিজিয়া, আরজু, ভাণ্ডারিয়ার রাসেল মোল্লা, মনিরুজ্জামান, ফাতিমা, রাসেল, নলছিটির মিফতা, আজিজুল, রাজাপুরের মনোয়ারা, আলাউদ্দিন, সোহেল, আবুল কালাম, ভোলার সুইটি, বাউফলের সিদ্দিকুর, রুকাইয়া, বরগুনার আকাশ, সাতক্ষীরার সোহাগ, মঠবাড়িয়ার নাঈমুল, ঝালকাঠির আল-আমিন ও বরিশালের সাব্বির। এছাড়া দুইজনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে তাদের নাম জানা যায়নি।
ঝালকাঠি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, পুলিশ বিভাগের ডিআইজি নিহতদের দাফন ও সৎকারের জন্য জন্য প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন।
তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় এখনও কোন মামলা করা হয়নি। তবে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন। চালক, সুপারভাইজার এবং হেলপারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী জানান, এই মুহূর্তে নিহতদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যে সব জেলার ব্যক্তিরা এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন সেসব জেলার প্রশাসকরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।