
আমার কাগজ ডেস্ক
্মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন দাবি করেছেন, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার আগেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতেন। একটি আসন্ন প্রামাণ্যচিত্র সিরিজে তিনি এ বিষয়সহ দীর্ঘদিন ধরে চাপা থাকা বহু তথ্যই সামনে আনবেন।
কার্লসন গত মঙ্গলবার পিয়ার্স মরগানের অনুষ্ঠান আনসেন্সরড নিউজে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের নেতৃত্ব কখনোই ৯/১১ হামলা নিয়ে তাদের মনোভাব লুকায়নি। বরং তারা মনে করত, ওই হামলা যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে।
টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপক কার্লসন আরও বলেন, ‘আমি তো কখনো বলিনি যে হামলাটা ইহুদিরা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এমন কথা বলা হলো আসল প্রশ্নগুলো ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা। এতে সত্যিকারের অনুসন্ধানকে দুর্বল করা হয়।’
‘ঠিক ওই হামলার পরই বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন, “এটা আসলে ভালো একটা ঘটনা। কারণ, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে, যেটিতে আমরা কয়েক দশক ধরে অস্তিত্বের লড়াই করছি”,’ বলেন কার্লসন।
টাকার কার্লসন, মার্কিন সাংবাদিক
২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া নেতানিয়াহুর সাক্ষ্যকে ঘিরে কার্লসন এ মন্তব্য করেন। কংগ্রেসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, যুদ্ধে যেতে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে কখনো কখনো ‘বোমা মেরে বাধ্য করতে হয়’। তিনি ৯/১১ হামলার সঙ্গে পার্ল হারবারে জাপানি হামলার তুলনা করেছিলেন।
রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার কার্লসন বহুল আলোচিত ‘ইসরায়েলি আর্ট স্টুডেন্টস’–এর বিষয়ও উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন, এ বিষয়ে জনসাধারণ খুব কম জানেন এবং এ–সংক্রান্ত বেশির ভাগ প্রতিবেদন হাওয়া হয়ে গেছে।
২০০২ সালে মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া নেতানিয়াহুর সাক্ষ্যকে ঘিরে কার্লসন এ মন্তব্য করেন। কংগ্রেসে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, যুদ্ধে যেতে গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে কখনো কখনো ‘বোমা মেরে বাধ্য করতে হয়’। তিনি ৯/১১ হামলার সঙ্গে পার্ল হারবারে জাপানি হামলার তুলনা করেছিলেন।
টাকার কার্লসন বলেন, ‘আমরা জানি, কিছু “ইসরায়েলি আর্ট স্টুডেন্ট” পরিষ্কারভাবে শিল্পশিক্ষার্থী ছিলেন না; বরং ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার করে বেশ কিছুদিন আটকে রাখা হয়েছিল। পরে অভিযোগ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ হামলার পর জ্বলছে টুইন টাওয়ার। এই হামলায় নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ
কার্লসন আরও বলেন, ‘আমরা এটাও জানি, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন, আমি ইন্টারনেট নয়, এফবিআইয়ের নথি থেকে বলছি, ৯/১১ হামলা ভিডিও করেছিলেন এবং দৃশ্যত, আগে থেকেই হামলার খবর জানা ছিল তাঁদের।’
টাকার কার্লসন, মার্কিন সাংবাদিক
‘ইসরায়েলি আর্ট স্টুডেন্টস’–এর প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় ২০০০ সালের শেষ দিকে। তখন তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সামরিক সংস্থার বিভিন্ন ভবনে হাজির হতে শুরু করেন। তাঁরা সেখানে ছবি বিক্রি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করতেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ‘শিক্ষার্থী’ বারবার চিহ্নিত করা নেই এমন সব স্থান, গোপন প্রবেশপথ, এমনকি কর্মকর্তাদের বাড়িতেও যেতেন।
ওই সময়কার গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ২০০১ সালের শুরুর দিক থেকে ৯/১১ হামলার আগপর্যন্ত অন্তত ১৪০ জন ইসরায়েলি নাগরিককে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগে আটক করা হয়। হামলার পর আরও প্রায় ৬০ জনকে আটক করা হয়। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ওই ‘শিক্ষার্থীদের’ কিছু দল হামলাকারীদের আবাসস্থলের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ হামলা হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এ হামলা ৯/১১ নামে পরিচিত। ওই দিন আল-কায়েদার সদস্যরা দুটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নিউইয়র্কের বিশ্ববাণিজ্য কেন্দ্রের সুউচ্চ জোড়া ভবন বা টুইন টাওয়ারে হামলা চালান। আরেকটি উড়োজাহাজ আছড়ে পড়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনে। পেনসিলভানিয়াতেও হামলা হয়।
এসব হামলায় প্রাণ যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষের, আহত হন প্রায় ২৫ হাজার। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্যই নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা এটি।
টুইন টাওয়ারে যখন উড়োজাহাজ হামলা চালানো হয়, তখন ভবনটিতে ১৭ হাজার ৪০০ মানুষ ছিলেন। নর্থ টাওয়ারে যেখানে হামলা হয়, সে স্থানের কেউই বাঁচতে পারেননি; কিন্তু ১৮ জন সাউথ টাওয়ারের ইমপ্যাক্ট জোনের ওপরের মেঝে থেকে বেঁচে যান।
হতাহত মানুষের মধ্যে ৭৭ দেশের নাগরিক ছিলেন। এই হামলায় নিউইয়র্ক নগরের ৪৪১ উদ্ধারকর্মী নিহত হন। হামলার পর হাজারো মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিষাক্ত ধ্বংসস্তূপে কাজ করা অনেক অগ্নিনির্বাপণকর্মীও ছিলেন।