
স্পোর্টস ডেস্ক
ঢাকা স্টেডিয়ামে এখনো খেলা মাঠে গড়ায়নি। আগামী ৪ জুন বাংলাদেশ-ভুটান এবং ১০ জুন বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর ম্যাচ। বাফুফের কর্তাদের দম ফেলবার সময় নেই। কীভাবে ম্যাচটা সফলভাবে আয়োজন করবে তা নিয়ে ব্যতি-ব্যস্ত। এর মধ্যে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)।
গতকাল বাফুফেকে দেওয়া এনএসসির চিঠিতে, গেইট মানির ১০ ভাগ, প্রচারস্বত্ত্বের ১৫ ভাগ, গ্রাউন্ডে রাখা প্যারামিটার বোর্ডের বিজ্ঞাপনের ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থের ৫০ ভাগ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাফুফে এখনও খেলাই আয়োজন করতে পারলো না, তার আগেই এনএসসির চিঠি পেয়েছে টাকা দাও। এনএসসির চিঠি পেয়ে বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন তারা এখন কোনো টাকা দিতে পারবেন না।
এনএসসি যেন আবদার করে বসেছে। ২০১৯ সালে সংস্কার কাজ হাতে নিয়ে এখনো শেষ করতে পারেনি। এখনো স্টেডিয়ামের টুকটাক কাজ চলছে। বলতে গেলে এখনো অসমাপ্ত, কদিন আগে মাঠ খুঁড়ে পুনরায় রিপেয়ার করতে হয়েছে। এনএসসির এমন কাজ দেখতে হয়েছে দেশের ক্রীড়ামোদীদের। মাঠ সম্পন্ন হওয়ার পরও পানির পাইপে লিকেজ ধরো পড়েছে। ৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটা স্টেডিয়াম সংস্কার কাজ করে যাচ্ছে। টানা ৫টা বছর দেশের এক নম্বর স্টেডিয়ামে খেলা নেই। সংস্কার কাজ চলছে। আর এ কারণে ফুটবলের কতটা ক্ষতি হয়েছে সেটা ফুটবলের লোকজনই অনুধাবন করতে পারেন।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ গত কয়েক মাস আগে দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ঢিলেঢালা সংস্কার কাজের কারণে কোনো জবাব দিতে হয়নি। নানা অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতামত ২০১৯ সালে কাজ ধরলে এত দিনে একাধিক নতুন স্টেডিয়াম নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যেভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাজ করেছে তাতে দেশের ফুটবলের যে কতটা ক্ষতি হয়েছে, বাফুফের কাছে সেই হিসাব রয়েছে। হিসাব জানে ক্লাবগুলো।
নির্ধারিত খেলা ছাড়াও ঢাকার বাইরে লিগের খেলা খেলতে গিয়ে ৫ বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিতে হয়েছে ক্লাবগুলোকে। মোহামেডানের ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব বার বার বলেছেন লিগের এক-একটা ক্লাবের বাজেটের বাইরে খরচ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দায়িত্ব গ্রহণের পর দ্রুত কাজ শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
প্রায় ১৬০ কোটি টাকায় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ করতে হয়েছে। এখনো ঠিকাদারদের দেনা-পাওনা, হিসাব-নিকাশ শেষ হয়নি তার আগেই বাফুফের কাছ থেকে লভ্যাংশ আদায়ে চিঠি দিয়েছে। ক্রীড়া পরিষদের চিঠি নিয়ে সচিব আমিনুল ইসলাম উলটো তোপ দাগিয়েছেন। তার কথা হচ্ছে বাফুফেকে উলটো ছাড় দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্যারামিটার থেকে ৫০ ভাগ আয় ছাড় দিচ্ছি বাফুফেকে। আর ৫০ ভাগ আয় সরকারি খাতে দিতে বলেছি। ক্রীড়া পরিষদ অবকাঠামো করে দিল, সব কাজ করে দিল। ব্যবহার করবেন আর আপনি (বাফুফে) সেটার মূল্য দেবেন না। এটা তো আয়েরই একটা খাত।’
চিঠিতে লেখা নেই কোন খেলার জন্য লভ্যাংশ চাওয়া হয়েছে। আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দেশি-বিদেশি সব খেলার জন্যই বলা হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ-সিংগাপুর ম্যাচও থাকবে।’ প্রশ্ন ছিল বাফুফে এখনো খেলাই শুরু করতে পারলো না তার আগেই টাকা চেয়ে চিঠি। আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘উনাদের (বাফুফে) কথা থাকলে আমাদেরকে জানাবে।’
স্টেডিয়ামের মাঠ সংস্কারেই নাকি প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ করেছে এনএসসি। ৫ কোটি টাকা কোথায় খরচ করল তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে ফুটবল অঙ্গনে। বাফুফেও জানতে চায় এই অর্থ কোথায় ব্যয় করা হয়েছে। ৫ কোটি টাকায় নতুন মাঠ বানালেও সেটি সম্পন্ন করতে পারেনি এনএসসি। খেলার উপযোগী মাঠ করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে মাঠ সংস্কার করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয় বাফুফেকে। বর্তমান মাঠটি নতুন করে কাজ করতে গিয়ে দেড় কোটি টাকা খরচা করে ফেলেছে। তার পরও এই মাঠ সত্যিকার অর্থে উন্নত মাঠ মনে করার সুযোগ নেই। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন ঢাকা স্টেডিয়ামের মাঠটি নতুন করে তৈরি করতে হবে।