শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরের গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিদেশী ফল সুইট মেলনের। আনোয়ার হোসেন নামের এক যুবক এই ফল চাষ করে এখন লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন। তার বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতীর সীমান্তবর্তী গোমড়া গ্রামে।
কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন জানান, উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল সুইট মেলন। এটি দেখতে অনেকটা বেল কিংবা বাতাবি লেবুর মতো হলেও এটির ভেতরের অংশ রসালো তরমুজের মতো। তাই ইউটিউব দেখে গত বছর নিজের ১০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলেন সুইট মেলনের। সে সময় বীজসহ সব কিছু মিলিয়ে খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। লাভও হয়েছিল বেশ। তাই এবার উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় জমির পরিমাণ বাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে সুইট মেলনের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে সারা জমিতে ফল আর ফুলে ভরে গেছে। এবার লক্ষাধিক টাকার ওপরে লাভ করার আশা।
আনোয়ার হোসেন বলেন, পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি শুরু করি। তবে সেখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। পরে চাকরি ছেড়ে চলে আসি নিজ গ্রামে। যুক্ত হই বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে। এরপর চিন্তা করি ব্যতিক্রম কিছু চাষাবাদের।
এই বিদেশি রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন আনোয়ারের জমি দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। তারা জানান, আগামীতে চাষ করবেন মরুভূমির এই লাভজনক ফল। আর পাইকাররাও ফল নেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
স্থানীয় পাইকার হাফিজউদ্দীন বলেন, এ ফল ৩-৪শ টাকা কেজিতে বিক্রি করা সম্ভব। অনেকে চাষ করলে শেরপুরসহ আশেপাশের জেলায় বাজার ধরা যাবে। আগ্রহী কৃষক মাহমুদ আলী বলেন, পাহাড়ি এলাকায় কাকরোল, করলা, বরবটি, চিচিঙ্গা, বেগুন চাষ করি। ভাতিজা আনোয়ার যে ফলটা লাগাইছে, সেটা খুব মিষ্টি। পাইকাররাও আসছে দেখতে, চাহিদা থাকায় সামনের মৌসুমে এক বিঘা জমিতে এই ফল চাষ করার ইচ্ছা আছে।
আরেক কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি ঢল আর হাতির আক্রমণের কারণে ধানের আবাদ তো ঘরে তুলতেই পারি না। বছর জুড়ে তাই বিভিন্ন সবজি চাষ করি। আনোয়ার বিদেশি যে ফল চাষ করছে, সেটা খেতে খুবই সুস্বাদু। সামনের বার আমিও চাষ করমু।
ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, এই ফলের চাষ সম্প্রসারণ করলে স্থানীয় কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। আমাদের দেশে এটি নতুন এলেও সুপার শপগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে আনোয়ারের ফলগুলো শহর থেকে পাইকাররা এসে দরদাম করছে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রানী নাথ বলেন, সুইট মেলন ফলটি সাম্মাম, খরবুজ, খরমুজ, কেন্টালোপ, নেটেড মেলন নামে বিভিন্ন দেশে পরিচিত। এই বিদেশি ফলের কয়েক রকম জাত রয়েছে। ফলটির খোসা বেশ পুরু হওয়ায় সংরক্ষণ ও পরিবহনে নেয়ার সুবিধা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ফলের গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পানি আটকে থাকলে গাছের গোড় পঁচে গাছ মারা যায়। তাই এগুলো মরুভূমিতেই আবাদ হয়। তবে আমাদের গারো পাহাড়ের মাটির একটি বিশেষ গুণ রয়েছে, তা হলো পানি আটকে থাকে না। তাই এখানে সুইট মেলন জাতের ফলগুলো চাষ ভালো হবে।