চট্টগ্রাম সংবাদদাতা
গতকাল শনিবার সন্ধ্যার আগে উড়োজাহাজ থেকে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পাশে তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। ডলারভর্তি এসব ব্যাগ পাওয়ার আট ঘণ্টা পর, অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটে জাহাজটি থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এই তিন ব্যাগে কত ডলার ছিল, তা–ই নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
মুক্তিপণের অঙ্ক কত, তা জানে তিনটি পক্ষ। এক. সোমালিয়ার দস্যুরা, যারা জাহাজটি জিম্মি করেছিল। দুই. মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ এবং তিন. লন্ডনভিত্তিক জাহাজের বিমা কোম্পানি। এই তিন পক্ষের মধ্যে মালিকপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে নারাজ।
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে জাহাজটি ছিনতাই করে দস্যুরা। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। এরপরই শুরু হয় দর-কষাকষি। দর-কষাকষি চূড়ান্ত হওয়ার পর গতকাল সন্ধ্যার আগে মুক্তিপণের অর্থ দেওয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর জাহাজটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হারমিয়া বন্দরের উদ্দেশে রওনা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যায়।
জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম আজ রোববার দুপুরে নগরের আগ্রাবাদে কেএসআরএম কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেনিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সোমালিয়ার আইন অনুয়ায়ী জাহাজটি সমঝোতার সব প্রক্রিয়া বৈধভাবে হয়েছে। সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী অনেক বিষয় প্রকাশ করতে পারব না আমরা।’
তবে তিন ব্যাগে কত ডলার ছিল, তা নিয়ে মালিকপক্ষ কোনো কিছু না জানালেও একাধিক সূত্রে নানা তথ্য মিলেছে। সোমালিয়ার স্থানীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এসব সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, সোমালিয়ার দস্যুরা ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ পেয়ে জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে।
সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি সোমালিয়া অনলাইনের এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা। আরেকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পান্টল্যান্ড মিররের এক্স বার্তায় স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ নেওয়ার পর জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে।
পান্টল্যান্ড পোস্টের অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ আদায়ের পর দস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে। জলদস্যুরা তীরে অবতরণের সময় সেখানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
এর আগে ২০১০ সালে ছিনতাই হওয়া একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয় দস্যুরা। সে সময় সোমালিয়া রিপোর্টের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজটি মুক্ত করতে চার মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। এমভি জাহান মণি জাহাজের মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি এখনো স্বীকার করেনি মালিকপক্ষ।
জাহান মণি জাহাজের ক্ষেত্রে ডলারভর্তি দুটি ব্যাগ উড়োজাহাজ থেকে ফেলা হয়েছিল। এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে ব্যাগ ছিল তিনটি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সমঝোতার প্রক্রিয়ায় থাকা একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে জানান, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের মুক্তিপণের বিষয়টি সঠিক নয়। এমভি জাহান মণির চেয়ে অনেক কম মুক্তিপণে (চার মিলিয়ন ডলারের চেয়ে কম) জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা; যদিও আরেক কর্মকর্তা জানান, জাহাজটি ছাড়িয়ে আনতে মুক্তিপণসহ সব মিলিয়ে জাহান মণির চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ হয়েছে।
নাবিকদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী জিম্মি ঘটনার শুরু থেকে খোঁজখবর রাখছিলেন। তিনি বলেন, মুক্তিপণ কত, তা মিলিয়ন ডলার কোয়েশ্চেন। সমঝোতার শর্ত অনুযায়ী বিমা কোম্পানি বা মালিকপক্ষ এটি কখনোই স্বীকার করবে না।
জাহাজটি বর্তমানে দুবাইয়ের পথে রয়েছে এবং নাবিকরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। জাহাজটি আগামী ১৯ এপ্রিলের দিকে দুবাইয়ের বন্দরে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন কেএসআরএম গ্রুপের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুল করিম।