
ড. মো. জুলফিকার আলী
আমার কাগজ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) নতুন মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ড. মো. জুলফিকার আলী। গত ১২ অক্টোবর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদে যোগদান করেন।এর আগে গত ১০ অক্টোবর ২০২৩ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করা হয়। মহাপরিচালক পদে যোগদানের পূর্বে তিনি একই ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদে কর্মরত ছিলেন।
এ ছাড়া তিনি ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) এবং মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যথাক্রমে সদর দপ্তরের গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা এবং পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান হিসেবেও সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন।
ড. মো. জুলফিকার আলী বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ স্ট্যার্লিং থেকে ফিশ নিউট্রিশন ও ফিড টেকনোলজিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এর পূর্বে তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ফিশারিজ ইন ফিশারিজ টেকনোলজিতে ১ম শ্রেণিতে প্রথম স্থান এবং ১৯৮৬ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ফিশারিজ (সম্মান) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮০ সালে নীলফামারী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৮২ সালে কারমাইকেল সরকারি কলেজ, রংপুর থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
তিনি ওয়ার্ল্ড ফিশ-বাংলাদেশ এর জাতীয় পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় জাতীয় পরামর্শক, মৎস্য খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করেন তিনি। এ ছাড়া
দেশের ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০’ এবং ‘মৎস্যখাদ্য বিধিমালা ২০১১’ প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন ড. মো. জুলফিকার আলী।
অন্যদিকে মৎস্য অধিদপ্তরের কোয়ালিটি কন্ট্রোল গবেষণাগারে খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি, দেশে মৎস্যচাষে ব্যবহৃত ফিড এডিটিভস ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি বিষয়ে জরীপ এবং গুণগতমানসম্পন্ন খাদ্য উৎপাদনে সারাদেশে ১২০ বাণিজ্যিকভাবে খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারিগরী কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। তিনি বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের গুণগতমানসম্পন্ন খাদ্যের ফরমুলেশন, খাদ্য প্রয়োগ কৌশল এবং খামার উপযোগী স্বল্পমূল্যের মৎস্য খাদ্য তৈরির পিলেট মেশিন উদ্ভাবন করেন।
মৎস্য ও চিংড়ির মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং ইনস্টিটিউট কর্তৃক ২০০৪ সালে ‘ Fish Feed Reference Standrads For Bangladesh’ শিরোনামে একটি গাইড বই প্রণয়ন ছাড়াও দেশে ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০’ এবং ‘মৎস্যখাদ্য বিধিমালা ২০১১’ প্রণয়ন এবং ‘মৎস্যখাদ্য উৎপাদন, আমদানী ও বিপণন বিষয়ে প্রতিপালনীয় দিকনির্দেশিকা’ প্রণয়ণে অন্যতম সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
বিশিষ্ট মৎস্য পুষ্টিবিজ্ঞানী ড. মো. জুলফিকার আলী আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে ৬০টিরও বেশি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ০৫টি। ইনস্টিটিউটে তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সংখ্যা ০৫টি। এ ছাড়া তার গবেষণা মনোগ্রাফের সংখ্যা (বুকলেট, লিফলেট ও বুলেটিন) ৩৫টি। তিনি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এস শিক্ষার্থীদের ০৮টি থিসিস সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং ০২ পিএইচডি থিসিস মূল্যায়ন করেন। তিনি বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ও কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বোর্ড অব গর্ভনরস এর একজন সদস্য।
ব্যক্তিজীবনে তিন সন্তানের জনক ড. মো. জুলফিকার আলী। তার সহধর্মিনী নাজমুন নাহার (নিপু)। ড. মো. জুলফিকার আলী ১৯৬৫ সালের ২৫ জুন নীলফামারী জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ডা. মো. আবুল কাশেম এবং মাতার নাম এফতারা বেগম।
উল্লেখ্য, ড. মো. জুলফিকার আলী ০৪ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহস্থ স্বাদুপানি কেন্দ্রের মৎস্য খাদ্য এবং পুষ্টি বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।