আমার কাগজ প্রতিবেদক
বিপুল সংখ্যক মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের শেষ সময়ে যেতে না পারার ঘটনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সোমবার (৩ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও উড়োজাহাজের টিকিট সংকটে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো উড়োজাহাজে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে এবং বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা এ জন্য দায়ী করেছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে।
তারা বলছেন, গত মার্চেই মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী প্রবেশের জন্য ৩১ মে পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেও মন্ত্রণালয় এ নিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয় ১৬ মে। ফলে শেষ মুহূর্তে উড়োজাহাজের টিকিটের তীব্র সংকট তৈরি হয়। অন্যদিকে ৩১ মে এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের ডেডলাইনকে ঘিরে মে মাসের শেষ দশ দিনে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে টিকিটের অজুহাতে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া মালয়েশিয়া বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ইতিপূর্বে বাংলাদেশী শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করলেও পরবর্তীতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে দেশটিতে পুনরায় শ্রম বাজার খোলা হয়। মালয়েশিয়া যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন যে, তারা মালয়েশিয়ার ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অগ্রহণযোগ্য কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না। জমি বিক্রি করে ও চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার টাকা জোগাড় করেও শেষ পর্যন্ত যেতে না পেরে তারা এখন নিঃস্ব। শেষ দশ দিনে বিমানের টিকিটের অজুহাতে ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর নিকট থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সক্রিয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর অবৈধ কর্মকাণ্ডের কারণে মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের হয়রানি ও তাদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং সেই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানা যায়।
আর এতে করে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে তাদের মানবাধিকার। এজন্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিশন মনে করে, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য অনতিবিলম্বে তদন্তপূর্বক প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে অভিযোগে উল্লিখিত শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেছে তার মধ্যে রয়েছে-
১. মালয়েশিয়ার প্রবেশের শেষ সময়সীমাকে কেন্দ্র করে যারা শেষ দশ দিনে প্রায় ৩০ হাজার যাত্রীর কাছ থেকে বিমানের টিকিটের অজুহাতে মাথাপিছু অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা করে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত অভিযোগটি তদন্ত করে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও যথাসময়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক মালয়েশিয়া যেতে না পারার পেছনে দায়ী প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভিসা প্রাপ্ত শ্রমিকদের মালয়েশিয়া প্রেরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৩. প্রতারণার মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায়পূর্বক নাম-সর্বস্ব কোম্পানিতে শ্রমিকদের প্রেরণ এবং মালয়েশিয়া যাওয়ার পর কাজ না পাওয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-কে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১০ জুলাই ২০২৪ তারিখ প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।
Related Stories
July 25, 2024 8:08 PM
July 25, 2024 3:57 PM