
আমার কাগজ ডেস্ক
বহুল প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ টানেলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। টানেলের নির্মাণ কাজ এখন পর্যন্ত ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ শেষে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই খুলে দেওয়া হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ায় নদীর তলদেশে প্রথমবারের মতো নির্মিত এই টানেলটি।
প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মূল টানেলের ৯৯.৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছি এবং প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৭.৫ শতাংশ। এখন টানেলের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, টানেলটি চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউনস’-এ পরিণত করবে। এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে এবং এই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করবেন।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, মাল্টিলেন টানেলটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরকে আনোয়ারা উপজেলার সাথে সংযুক্ত করবে। এর মাধ্যমে কক্সবাজারকে সরাসরি চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত করবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, টোল প্লাজা সংক্রান্ত ক্রস প্যাসেজ ও টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টানেলের নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, টানেলটি এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করবে।
তিনি বলেন, ‘টানেলটি চালু হলে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হবে, যা দেশের বাকি অংশের সাথে সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা এনে দেবে।’
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উঁচু দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারে।
নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৪০ কিলোমিটার। যাতে ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি এপ্রোচ রোড ও একটি ৭৪০ মিটার ব্রিজের পাশাপাশি মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সাথে সংযুক্ত করবে।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে, প্রধান বন্দর নগরী ও কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশকে নদীর পূর্ব দিকে এবং আনোয়ারা উপজেলার সাথে যুক্ত করে মোট ৭৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের এই কাজের উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯.৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদের হারে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।