চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে করে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
জানা যায়, মীরসরাইয়ে ১৯১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৩ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। চাকরি থেকে অবসর এবং মৃত্যুজনিত কারণে বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকের ওই পদগুলো শূন্য হয়, যা পরে আর পূরণ করা হয়নি। এছাড়াও ৬৩টি সহকারী শিক্ষক পদও শূন্য রয়েছে। এদিকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের ওই পদগুলো শূন্য থাকায় পাঠদানসহ দাপ্তরিক নানা কাজে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি সার্বিক শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও মীরসরাই পৌরসভায় ১৯১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রথম শ্রেণির বারইয়ারহাট পৌরসভায় কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে করেরহাট, চিনকি আস্তানা, জোরারগঞ্জ, বামনসুন্দর, ঝুলনপোল, রঘুনাথপুর, মীরসরাই সদর, আবুতোরাব ও সরকারহাট ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক ক্লাস্টারে একজন করে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেন। নয়টি ক্লাস্টারের জন্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছে চারজন। ১৯১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। আট থেকে ১০ বছর হলো উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবসর, মৃত্যু ও সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ না থাকায় ৫৩টি পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। আর ওই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারাই প্রধান শিক্ষকের পদ সামলাচ্ছেন।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান করাতে পারছেন না। আবার প্রধান শিক্ষকের একটি পদ শূন্য থাকার মানে বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা। এ ছাড়া নিয়মিত একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যেভাবে দক্ষতার সঙ্গে দাপ্তরিক কাজসহ বিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারেন, একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়ে ওঠে না।
এদিকে ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাত্র একবার সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিলেও এরপর গত এক দশকে আর সরাসরি প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। এ কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ প্রায় এক দশকেও আর পূরণ হয়নি। তাই সংশ্লিষ্ট বিভাগ ওই সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ চালানোর জন্য জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছে।
মীরসরাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম ফজলুল হক বলেন, মীরসরাই উপজেলায় ৫৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ৬৩টি জন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তবে ৫৩ জন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া আছে। এরপরও দাপ্তরিক কাজ ও পাঠদানে কিছু সমস্যা থেকেই যায়। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ নিয়মিত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন। সংকট থাকলেও সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।