ক্রীড়া প্রতিবেদক
কখনও নিজেদের ভুলের কারণে, কখনওবা অন্যদেশ প্রত্যাখ্যান করায় প্রায় ১০ মাস কোনো ম্যাচ খেলতে পারেনি মেয়েরা। ফেব্রুয়ারিতে মানা করেছে সিঙ্গাপুর। মার্চে অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে পাঠায়নি বাফুফে। প্রবল সমালোচনার পর জুলাইয়ে মঙ্গোলিয়াকে প্রস্তাব পাঠালেও আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। ঘটা করে অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও ওমেন্স সুপার লিগও আলোর মুখ দেখেনি। এসব কিছু মিলিয়ে কোনো ম্যাচ না খেলে, শুধু অনুশীলন করে যাওয়া সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকারদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। নেতিবাচক সংবাদ শিরোনামের মধ্যে সময় পার করা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারাও মেয়েদের ম্যাচ আয়োজনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা শুরু করেন। সবখানে ব্যর্থ হওয়ার পর এই দুঃসময়ে বাফুফে নারী ফুটবল কমিটি পাশে পেয়েছে নেপালকে। গত সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে যাদের হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ, সেই হিমালয়কন্যারা এবার বিপদে বাংলাদেশের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে জুলাইয়ে ঢাকায় আসছে নেপাল নারী ফুটবল দল। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ১২ ও ১৫ জুলাই দুটি প্রীতি ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবেন বাংলাদেশের মেয়েরা।
মেয়েদের আগে ছেলেদের ফুটবলেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল নেপাল। ২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। সেই সময় কোনো দেশই বাংলাদেশের আমন্ত্রণে সাড়া দিচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত করোনার মধ্যেও সেই বছরের নভেম্বরে ঢাকায় দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল নেপাল। প্রীতি ম্যাচ এবং টুর্নামেন্ট মিলিয়ে গত তিন বছর নেপালের বিপক্ষে ছয়বার মুখোমুখি হয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়ারা। এর মধ্যে মাত্র একটিতে জিতেছিল বাংলাদেশ। তিনটিতে ড্র এবং বাকি দুই ম্যাচ হেরেছিল। তবে জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বারবারই ফুটে উঠেছে নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যকার ফুটবলে বন্ধুত্বের বিষয়টি। কারণ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাপে যখনই বিদেশি দল জোগাড় করতে পারছিল না বাফুফে, তখনই দ্বারস্থ হয়েছে হিমালয়ের দেশটির। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডাকে কখনোই মানা করেনি নেপাল। এবার মেয়েদের ফুটবলের দুঃসময়ে পাশে নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। ২০২১ সালে উজবেকিস্তানে নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব খেলার আগে বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে এগিয়ে আসে তারা। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে ফিফা টায়ার ওয়ান দুটি ম্যাচের একটিতে হেরেছিলেন এবং আরেকটিতে ড্র করেছিলেন সাবিনারা। জুলাইয়ে নতুন সূচি ঠিক থাকলে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়েদের দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপাল।
অনেক চেষ্টা করেও মঙ্গোলিয়াকে রাজি করাতে পারেনি বাফুফে। এখন নেপালকে রাজি করাতে পেরে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্তারা। নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ সামনে রেখে আজ সংবাদ সম্মেলন করতে পারে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। মেয়েদের মধ্যেও প্রাণ ফিরে এসেছে। তার পরও কিছুটা অস্বস্তি আছে ফুটবলাঙ্গনে। কারণ, অতীতে আশ্বাস দিয়েও সাবিনাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলাতে পারেনি বাফুফে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পর ভুটান একটি প্রীতি ম্যাচসহ খেলেছে চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। পাকিস্তান দলও এ বছর খেলেছে পাঁচ ম্যাচ। নেপাল চার ম্যাচ। সবচেয়ে বেশি সাত ম্যাচ খেলেছে ভারত। অথচ সাফজয়ী সাবিনারাই ৯ মাস পার হলেও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার স্বাদ পাননি। এবার যদি মেয়েদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হয়।