নোয়াখালী প্রতিনিধি
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের পছন্দের তিন প্রার্থীকে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি তার সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী ওরফে পিপুলের সমর্থনে চর পার্বতী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে আয়োজিত কর্মীসভায় এ কথা বলেন। কাদের মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
ভিডিওতে উপস্থিতি ভোটারদের উদ্দেশ্যে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার কথা সোজাসুজি। বাঁকা কথা আমি বলি না। পরে ভেজাল হয়ে যাবে। কী বলছি বুঝেছেন? এমনি ভালো আছেন। ভোটের পর (জাতীয় সংসদ নির্বাচন) বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়েছে?…না। আপনারা শান্তিতে আছেন। ভোট যদি আমাদের তিনজনকে দেন, তাহলে কেন্দ্রে আসিয়েন। না হয় পরে ঝামেলা হলে আমি দায়িত্ব নিতে পারব না।’
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই আরও বলেন, শুধু শুধু কষ্ট করে কেন্দ্রে আসবেন না। বাড়িতে ঘুমাইয়েন। তাহলে পরে নিরাপদে বাকি পাঁচটা বছর থাকতে পারবেন।
আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে কোম্পানীগঞ্জের সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, বিষয়টি তার নজরে আসেনি। তিনি আজই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বলবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভা কিংবা কর্মীসভা করার সুযোগ নেই। এছাড়া প্রচারণাকালে ভোট না দিলে ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে বলাও বেআইনি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও কাদের মির্জা ফোন ধরেননি।
এদিকে কাদের মির্জার এমন বক্তব্যে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মিজানুর রহমান ওরফে বাদল। তিনি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
মিজানুর রহমান বলেন, এখনও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমাও শেষ হয়নি। এমন অবস্থায় কাদের মির্জা পরিবারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন এবং তার প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারদের নানা হুমকি দিচ্ছেন। তিনি (মিজানুর রহমান) এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করবেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ২৯ মে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ওমর আলী।
তাদের মধ্যে মোহাম্মদ গোলাম শরীফ চৌধুরী আবদুল কাদের মির্জার সমর্থিত প্রার্থী। গোলাম শরীফ ছাড়াও কাদের মির্জা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জসিম উদ্দিন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে পারভীন আক্তারকে সমর্থন দিচ্ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তিনজনের জন্য প্রায়ই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছেন তিনি।