
আমার কাগজ ডেস্ক
সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদের বিলুপ্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বুধবার (১২ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে এ এক দফার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকারের পদত্যাগ চেয়ে ফখরুল বলেন, ‘এখনো সময় আছে এই ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করুন। অন্যথায় পালাবার পথও খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
এক দফা ঘোষণার বক্তব্যের শুরুতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকের ঘোষণা আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হিসেবে দিচ্ছি না, এই ঘোষণা নির্বাসিত নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। রাজনৈতিক দলগুলো যুগপৎভাবে অবৈধ সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঘোষণা করব। এই ঘোষণা ঐতিহাসিক। জাতিকে মুক্ত করার আহ্বান। জাতিকে তার হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার।’
বক্তব্যের শুরুতে তিনি স্মরণ করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নিহত কর্মীদের প্রতি। তাদের নাম উল্লেখ করে শ্রদ্ধা জানান ফখরুল।
ঘোষণার আগে ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সংগ্রাম অস্তিত্বের সংগ্রাম। এই সংগ্রাম ১৮ কোটি মানুষের সংগ্রাম। ভোট দিতে চাই। যাকে খুশি তাকে দেব। সব রাজনৈতিক দল, যারা যৌথভাবে আন্দোলন করছি। সর্বসম্মতভাবে আমরা যৌথ ঘোষণা দেব যার যার জায়গা থেকে। প্রায় ৩৪টির মতো দল ও জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছি সর্বসম্মতভাবে।’
‘আসুন, দুর্ভেদ্য উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে লুটেরা ফ্যাসিবাদী সরকার সরিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্র নির্মাণ করি।’ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এ কথা বলেন ফখরুল।
প্রাথমিক কর্মসূচি উল্লেখ করে ফখরুল জানান, ১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আগামী ১৮ জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে এবং ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগরীতে এ পদযাত্রা হবে অনুষ্ঠিত হবে।
১৮ জুলাই ঢাকা মহানগরীতে সকাল ১০টায় গাবতলী থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত এ পদযাত্রাটি অনুষ্ঠিত হবে। এবং ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগরীর উত্তরার আব্দুল্লাপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।
এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের এক দফা ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। আজ দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশ শুরু হয়। এ সমাবেশেই বিএনপি উল্লিখিত এ দুই কর্মসূচি ঘোষণা করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশ শুরু হয়।
এ দিকে সমাবেশের ব্যানারে লেখা হয়েছে- গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের এক দফা যৌথ ঘোষণা।
অন্যদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী। এখন নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকা নেতাকর্মীদের পদচারণায় লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। এ সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন তারা।
এদিকে সমাবেশ ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।