![](https://amarkagoj.com/wp-content/uploads/2024/02/Turag-1024x575.jpg)
গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের শুরুর দিন শুক্রবার লাখো মানুষ একসঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
দেশের বৃহত্তম এই জুমার নামাজে তাবলিগ জামাতের অনুসারী ছাড়াও অংশ নিয়েছেন ঢাকা, টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা মানুষ।
ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে খুতবা পাঠ শুরু হয় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে। নামাজ শুরু হয় ১টা ৪৫ মিনিটে। এতে ইমামতি করেন বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি ও রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনের প্রধান আকর্ষণ শুক্রবারের জুমার নামাজে অংশ নিতে ভোর থেকেই ইজতেমামুখী বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের স্রোত শুরু হয়। নামাজ শুরুর আগেই বাসে, ট্রাকে, পিকআপে, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে তুরাগ তীরে হাজির হতে থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা।
তবে একদিন আগে থেকেই ইজতেমার মূল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার আসা মানুষ ময়দানে ঢোকার বিভিন্ন রাস্তা (বাটা রোড. হোন্ডা রোড, কামার পাড়া রোড, ব্যাংক বস্তি রোড) ছাড়াও অলিগলিসহ যেখানেই জায়গা পেয়েছেন সেখানে অবস্থান নেন।
অনেকেই বাড়ির ছাদ, তুরাগে ভাসমান নৌকা, মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির ছাদসহ যে যেখানে সম্ভব করতে পেরেছেন সেখানেই পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ, পলিথিন, ফয়েল পেপার, জায়নামাজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উপরও হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে জুমার জামাতে শরিক হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল। নামাজ শেষে মানুষ মহাসড়ক থেকে সরে যেতে শুরু করলেও ওই পথে যান চলাচল শুরু হতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা।
নরসিংদী থেকে ইজতেমার ময়দানে জুমার নামাজে যোগ দিতে আসা আব্দুল মতিন বলেন, “ইজতেমা ময়দানে দেশের বৃহত্তর জুমার নামাজে অংশ নেয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। ইচ্ছে পূরণের জন্য অনেক কষ্টে টঙ্গীতে পৌঁছাতে পারলেও ইজতেমা ময়দানে ঢুকতে পারি নাই। তাই নামাজ শুরুর দেড়ঘণ্টা আগেই কামারপাড়া সড়কে পলিথিন শিট কিনে বিছিয়ে তাতে বসে পড়ি।”
ময়মনসিংহ ফুলবড়িয়া থেকে পিকআপে করে ২৮ জন এসেছেন বিশ্ব ইজতেমার জুমার নামাজে অংশ নিতে। তাদের কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরিজীবী।
একইরকম কথা জানালেন, গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকা থেকে ইজতেমায় আসা মাসুদ রানা, ঢাকা থেকে আসা মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আমিনুল ইসলাম।
লাখো মানুষের অংশ নেওয়া জুমার বড় জামাতে শরিক হয়ে নামাজ আদায় করে অধিক সওয়াব অর্জন ও দোয়া পূরণের আশায় তারা অনেক কষ্ট করেও ইজতেমাস্থলে এসেছেন।
এর আগে ফজরের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের তিনদিনের কার্যক্রম শুরু হয়। অন্যান্য বছরের মতো এবারও যথারীতি ময়দানে উপস্থিত ধর্মপ্রাণ মানুষের উদ্দেশে তাবলিগের ছয় উসুল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ বিষয়ে আম বয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়।
এবারও বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবললি মারকাজের শুরা সদস্য ও বুজর্গরা বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়।
ইজতেমা ময়দানের মুরুব্বি প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, শুক্রবার বাদ ফজর থেকে বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষ মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলার আম বয়ান করেন। এ সময় বাংলায় বয়ান তর্জমা করেন মাওলানা নুরুর রহমান ।
জুমার পর মাওলানা ওমর ফারুক, আছরের পর মাওলানা জুবায়ের এবং মাগরিবের পর ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করবেন।
বিশ্ব ইজতেমা আসা বিদেশি মেহমানদের জন্য ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন ভাষাভাষীরা সেখানে আলাদা আলাদা স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তাবলিগের জামাতের অনুসারীরা নিজেদের জন্য নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেন। বিকালেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় ১৬০ একর আয়তনের পুরো ময়দান। বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে সেখানে বসেই তারা শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বিদের বয়ান শুনছেন।
কেউ কোনো বাড়তি কথা না বলে ‘আল্লাহকে রাজি-খুশি করতেই জিকির-আজগারে মহাব্যস্ত সময়’ পার করছেন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা সানোয়ার হোসেন।
তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমা হচ্ছে দুই পর্বে, দুই পক্ষের অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে। শুক্রবার শুরু হওয়া ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। ১১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।