সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর–আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কে জগন্নাথপুরের নলজুর নদের কাটাগাঙ্গের ওপরের বেইলি সেতুটি ছয় বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে চলাচলের উপযোগী রাখা হয়েছিল। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ বলছে, সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ টনের বেশি মাল বহন না করতে নোটিশ টানিয়ে দিয়েছিল তারা। সেখানে ২৫ টন মাল নিয়ে পার হওয়ার পথে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সেতু ভেঙে ট্রাকের চালক ও সহকারী নিহত হন। আর এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সওজ নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ না নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চালানোয় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাবাসী ও সুনামগঞ্জ সওজ সূত্র জানায়, ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমাতে ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালে সড়কের রানীগঞ্জ এলাকায় কুশিয়ারা নদীর ওপর দেড় শ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম বক্সগার্ডার সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। একই সময়ে সড়কের আরও ঝুঁকিপূর্ণ সাতটি সেতু ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ শুরু করা হয়। গত বছরের নভেম্বরে এই আট সেতু উদ্বোধন করা হয়। এর পর থেকে আঞ্চলিক এই মহাসড়ক দিয়ে বড় বড় গাড়ি চলাচল ব্যাপকভাবে শুরু হয়। সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব কমে ৫৫ কিলোমিটার।
সুনামগঞ্জ–জগন্নাথপুর–আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর উপজেলার কাটাগাঙ্গ এলাকায় বেইলি সেতু ভেঙে মালবাহী ট্রাক নলজুর নদে পড়ে যায়
সওজ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে নলজুর নদের কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ১৩ জুলাই সেতুর দক্ষিণ পাড়ের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে বড় গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হয়। ২০২২ সালের ১৫ জুলাই সেতুর উত্তর অংশের অ্যাপ্রোচের মাটি ধসে গর্তের সৃষ্টি হলে অ্যাপ্রোচের ওই অংশে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়। এর পর থেকে জোড়াতালি দিয়েই সেতুটি চালু রাখা হচ্ছিল। ১১ মার্চ রাতে সেতুটির পাটাতন খুলে নদীতে পড়ে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন নদী থেকে পাটাতন তুলে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। গত ১৬ জুলাই আবারও পাটাতন খুলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে ৫০০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে জগন্নাথপুর বাজারে আসার পথে সেতু ভেঙে ট্রাক নদীতে পড়ে চালক ও তাঁর সহকারীর মৃত্যু হয়।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক নুরুল হকের অভিযোগ, শুরুতেই অপরিকল্পিতভাবে কাটাগাঙ্গের ওপর বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। বারবার জোড়াতালি না দিয়ে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যাগ নিলে এই প্রাণহানি হতো না। এর দায়ভার সুনামগঞ্জ সওজ কর্মকর্তারা এড়াতে পারেন না। জগন্নাথপুরের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ জেলা বারের আইনজীবী আবু তাহেরও এমনটাই মনে করেন।
সুনামগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে পাঁচ টনের বেশি মালামাল না আনতে সেতুর সামনে সাইনবোর্ড লাগানো আছে। ২৫ টন মাল নিয়ে সেতু পার হতে গিয়ে সেতুর অ্যাপ্রোচের একটি অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। দুজনের প্রাণহানি হয়। নতুন সেতু নির্মাণের একটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে কীভাবে সড়কে যান চলাচল অব্যাহত রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।