চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
সেলিনা আক্তার যখন ওমানে ছিলেন, তখন দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার স্বামী। স্বামীকে বিদায় দিতে তিনি ছুটে আসেন দেশে। পরে স্বামীর শোকে কাতর সেলিনা দেশেই রয়ে যান। কিন্তু তিন মাসও পার হয়নি। এবার খবর এলো ওমানের সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তার দুই ছেলে। এমন শোকের সমুদ্র পেরিয়ে তিন দশকের প্রবাস জীবনে তিনি কী করে ফিরবেন, জানেন না।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সরেজমিনে এই দৃশ্য দেখা যায়।
জানা গেছে, সেলিনা আক্তারের দুই ছেলে মুহাম্মদ আব্বাস হোসেন (২৫ ) ও মুহাম্মদ আজাদ হোসেন (২০) গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে ওমানের আস শিফা সৈকতে গোসল করতে নেমে পানির স্রোতে তলিয়ে মারা যান তারা। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদগাঁও পাড়ায় সেলিনার শ্বশুরবাড়ি। তিন মাস আগে এখানেই তার স্বামী আহমদ হোসেনের (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। শোকে কাতর সেলিনা আক্তার এখন উপজেলার ধুরং এলাকার সায়েরপাড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে আছেন। তিন দশক আগে মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে পাড়ি জমান আহমদ হোসেন (৫৫) ও তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৪৫)। পরে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারা। ছয় ছেলের জন্মও সেখানে। এরমধ্যে ওমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে আয় উন্নতিও হয়েছে তাদের। গত কয়েক মাস আগে দেশে বাড়ির নির্মাণকাজ দেখতে আসেন আহমদ হোসেন। দেশে আসার পর হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। ওমানে বসে তার স্ত্রী সেলিনা সেই সংবাদ শুনে ছুটে আসেন স্বামীকে শেষ বিদায় দিতে। মায়ের সঙ্গে ছয় ছেলেও আসে দেশে। এরমধ্যে তিনজন ফিরেও যান ব্যবসার কাজে। ফিরে যাওয়া তিন ছেলের মধ্য দুই ছেলে এখন নেই।
এদিকে দোতলা বাড়ির ওপরের তলার শোয়ার ঘর থেকে সেলিনার কান্নার শব্দ আসছিল। কিছুক্ষণ পর দুজন স্বজনের সহায়তায় নেমে আসেন বৈঠকখানায়। গত রোববার নিহত দুই ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় মা সেলিনার। তারা মা এবং দেশে থাকা তিন ভাইয়ের খবর নিয়েছেন। ওমানে ফিরে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট করছেন কি না জানতে চেয়েছেন। সেলিনা বলেন, দুই ছেলে বারবার বলছিল, মা তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছে না। ভাইদের নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে আসো। সেলিনা জবাবে তাদের বলেছিলেন, তাদের বড় ভাই আক্তারের জন্য বউ ঠিক করে আসবেন। কিন্তু এরমধ্যে সব এলোমেলো হয়ে গেল। সেলিনার তিন ছেলে আকতার হোসেন (২৬), আয়মন হোসেন (১৩) ও আয়াজ হোসেন (৯) মায়ের সঙ্গে এখন দেশে আছে।