
মাওলানা বশির আহমদ
সমাজে সেলিব্রিটিদের ভূমিকা শুধু বিনোদন বা খ্যাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য। তাই তাদের আচরণ ও কার্যক্রম সমাজে গভীর প্রভাব ফেলে। বর্তমান সময়ে অনেক সেলিব্রিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ঈদ বাজেট, পোশাক, গাড়ি বা দামি উপহার নিয়ে পোস্ট করেন, যা সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য একপ্রকার মানসিক আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সামাজিক বৈষম্য ও বাস্তবতা : আমাদের দেশে একদিকে যখন লাখ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, অন্যদিকে কিছু ধনী ব্যক্তি এবং সেলিব্রিটি নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। এক শ্রেণির মানুষ যখন ঈদের নতুন পোশাক কেনার সামর্থ্য না থাকার কষ্টে দিন পার করছে, তখন অন্যরা লাখ লাখ টাকা খরচের ঘোষণা দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। এটি কেবল আর্থিক বৈষম্যেরই বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং এটি সমাজের দরিদ্র মানুষের মনে একধরনের হতাশা ও আক্ষেপের জন্ম দেয়।
সেলিব্রিটিদের উচিত কী?
একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের প্রকৃত সাফল্য কেবল নিজের আয়-উপার্জনে নয়, বরং তার মাধ্যমে সমাজ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে, সেটিতেও নির্ভর করে। সেলিব্রিটিদের উচিত তাদের খ্যাতি ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া।
✅ বিলাসিতার প্রদর্শন নয়, মানবতার প্রচার: সেলিব্রিটিরা যদি তাদের ফলোয়ারদের সামনে বিলাসিতার পরিবর্তে গরীবদের পাশে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, তাহলে অনেকেই তাদের অনুসরণ করে সমাজের কল্যাণে এগিয়ে আসবে।
✅ গরীবদের মুখে হাসি ফোটানো: ঈদ হলো সবার জন্য আনন্দের উৎসব। সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের সাহায্য করার মাধ্যমে এই আনন্দ আরও সার্থক হয়ে ওঠে। সেলিব্রিটিদের উচিত তাদের ঈদ বাজেট থেকে একটি বড় অংশ দান করা এবং মানুষকে এই বিষয়ে উৎসাহিত করা।
✅ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিবাচক বার্তা ছড়ানো: অনেক মানুষ সেলিব্রিটিদের অনুসরণ করে। তাই তারা যদি নিজেদের বিলাসিতার ছবি-ভিডিও প্রকাশ না করে বরং গরীবদের সাহায্যের গল্প শেয়ার করেন, তাহলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।
✅ যাকাত ও ফিতরার সঠিক প্রচলন: ইসলাম আমাদের সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ গরীবদের দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সেলিব্রিটিরা যদি এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেন, তাহলে ধনী শ্রেণির মধ্যে একটি দায়িত্ববোধ তৈরি হবে এবং সমাজের দারিদ্র্য কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
বিলাসিতা নয়, মানবতার দৃষ্টান্ত হোক প্রাধান্য: একজন সত্যিকারের আইকন সেই ব্যক্তি, যিনি শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও ভালো কিছু করেন। দানশীলতা ও সহানুভূতি কেবল ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, এটি মানবিক দায়িত্বও বটে। সমাজে যারা প্রভাবশালী, তাদের উচিত নিজেদের কাজের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। বিলাসবহুল জীবনযাপন প্রচার না করে, অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই প্রকৃত সম্মান ও সফলতা নিহিত।
আসুন, সবাই মিলে এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি, যেখানে ঈদের আনন্দ কেবল ধনীদের জন্য নয়, বরং সবার জন্য সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
লেখক: সাধারণ সম্পাদক TFK Moulvibazar.