
সিলেট প্রতিনিধি
সিলেটে টিলা কাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় জড়িত ব্যক্তিদের কাউকে আটক করতে না পারলেও টিলা কাটার সত্যতা পেয়েছেন আদালত। এ ছাড়া যাঁরা টিলা কাটছেন কিংবা মদদ দিচ্ছেন, তাঁদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সিলেট সদর উপজেলার ১৪টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন। এতে নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খোশনূর রুবাইয়াৎ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সরকার মামুনুর রশীদ। এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গতকাল শনিবার ‘সিলেটে পাথরের পর টিলাও সাবাড়’ শীর্ষক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন টিলা কাটায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি সরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বাহুবল, ওসমানী মুক্তিযোদ্ধা গুচ্ছগ্রাম, টিকরপাড়াসহ ১৪টি টিলাবেষ্টিত এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। এ সময় টিকরপাড়া এলাকাসহ কিছু স্থানে সম্প্রতি টিলা কেটে ঘর তৈরির সত্যতা পাওয়া গেছে। অন্যান্য স্থানে সম্প্রতি টিলা না কাটলেও আরও আগে টিলা কেটে ফেলার চিহ্ন স্পষ্ট রয়েছে।
একই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ছড়াগাং ও বুরজান চা-বাগানের জায়গা দখল করে টিলা কেটে বসতি নির্মাণ করার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানালে তারা বলছে, সেখান থেকে উচ্ছেদ করার জন্য চা–বাগানের লোকজন গেলে দখলকারীরা সশস্ত্র হয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে বাধা দেয়। এতে দখলকারী চক্রকে তাড়ানো যাচ্ছে না। এ বিষয়েও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযান শেষে সিলেট সদর উপজেলার ইউএনও খোশনূর রুবাইয়াৎ গণমাধ্যমকে বলেন, টিলা কর্তনকারী সবার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া টিকরপাড়া এলাকার যেখানে টিলা কেটে সম্প্রতি ঘর তৈরি করা হয়েছে, সেসব ভেঙে ফেলার পাশাপাশি নতুনভাবে আর কোনো ঘর তৈরি করতে দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণভাবে টিলার পাদদেশে বসবাসকারী কোনো পরিবারকেই সেখানে থাকতে দেওয়া হবে না।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আগামীকাল সোমবারও সিলেট মহানগরের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বে টিলা কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হবে। এটা নিয়মিত চলবে। এ ছাড়া আগামীকাল বেলা তিনটায় সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে টিলা কাটা রোধে করণীয় নির্ধারণ করতে উপজেলা প্রশাসন এক বৈঠক করবে। এতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবাদী সংগঠক, উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন।