
আমার কাগজ প্রতিবেদক
জাতীয় ঐক্যের যেকোনো প্রচেষ্টায় জামায়াতে ইসলামী ভূমিকা রাখবে উল্লেখ করে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘একটা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়। ইট উইল টেইক টাইম (এতে সময় লাগবে)। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো শেষ করতে সুযোগ দিতে হবে।’
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক এক আলোচনায় অংশ নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। এটি ছিল ‘জাতীয় সংলাপ ২০২৪’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সংলাপের প্রথম অধিবেশন। এই সংলাপের আয়োজক ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।
সংলাপে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের কাছ থেকে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। সব দল দিচ্ছে, আমরাও দিয়েছি। আমরা কমিশনগুলোর প্রধান ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে বার্তা দিতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদনগুলো হয়তো এসে যাবে। সেগুলো থেকে বাছাই করে জাতীয় ঐক্যের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের কাছ থেকে আসা কমন (অভিন্ন) প্রস্তাবগুলো নিয়ে তাদের অংশগ্রহণে আরেকটি সংলাপের ব্যবস্থা করুন। সেখানে একটা জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হতে পারে।’
এখনো ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে একটা দল আরেকটা দলকে নিয়ে বক্তব্যের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য তৈরি হয়েছিল, সেই ঐক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো বক্তব্য-বিবৃতি ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে আসা জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের আরেকটি কার্যক্রম।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘সংস্কার বিশাল ব্যাপার। রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে রাজনীতিকরণ ও দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয়েছে। একটা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়। কিন্তু একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করার সুযোগ দিতে হবে। তারপরই একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেই নির্বাচনের জন্য যুক্তিসংগত যে সময় প্রয়োজন, জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই সময় দিতে প্রস্তুত।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে দুটি গ্রুপের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে—গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক দল। আমাদের সংযত থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমরা যাঁরা ত্যাগ করেছি, আমরা যেন এমন কোনো বক্তব্য-বিবৃতি না দিই, যা ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামকে বিতর্কিত করে, বিভেদ তৈরি হয়। গণমাধ্যম অনেক সময় অনেক বিষয়কে বিকৃত করে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরির উপাদান মানুষের হাতে তুলে দেয়। আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করব, আপনারা নিশ্চয়ই জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করে দেশপ্রেমের অঙ্গীকার রক্ষা করবেন।’
এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বারবার বলা হয়েছিল, শহীদ পরিবারকে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল। পাঁচ মাস পর কেন অভিযোগ করতে হবে, তাঁদের চিকিৎসা হচ্ছে না, পরিবারের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না। তাহলে কি আমরা এই দায়িত্বগুলোকে অবহেলা করছি?…সরকারের দায়িত্ব, অঙ্গীকার পূরণ করে অবিলম্বে জুলাই–যোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তাঁদের যেন আর অশ্রুসিক্ত হতে না হয়। যারা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ অবিলম্বে সম্পন্ন করা দরকার। আসন্ন নির্বাচনের আগেই বিচারের একটা পর্যায় যেন জাতি দেখতে পারে। তাহলেই শহীদদের রক্তদানের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাতে পারব।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবনে জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আমি সংসদ সদস্যও ছিলাম। আমার ক্ষুদ্র শিক্ষায় দেশপ্রেম ও জাতিসত্তা সম্পর্কে যা বুঝেছি, তাতে আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক দল, মত, চিন্তার পার্থক্য থাকবেই। পার্থক্য না থাকলে বাংলাদেশে একটাই দল থাকত। দলের যেহেতু ভিন্নতা, মতেরও ভিন্নতা থাকবে। জাতির সাধারণ ইস্যুতে ঐক্যের ব্যাপারে অনেক সময় হীনম্মন্যতা দেখা যায়। ঐকমত্যের জন্য কিছু ছাড় দিতে আমরা রাজি নই। রাজনীতিতে একমত হওয়া জরুরি নয়, কিন্তু জাতির সাধারণ ইস্যুতে আমরা অনেক সময় একমত হতে পারি না।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনে প্রায় সাড়ে সাত বছর কারাগারে ছিলাম। ছয়বার আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, ৬৭ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।’