মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স
শুক্রবার (৯ আগস্ট ২০২৪) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মিটিং শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কিন্তু শিক্ষা বিষয়ে তাঁর ব্রিফিং এ অস্পষ্টতা থেকে যায়। যা স্পষ্ট করা খুবই জরুরি। তিনি বলেছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব সহসা খুলে দেয়া হবে বাট কবে নাগাদ, এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট টাইম লাইন তিনি দেননি। দীর্ঘদিন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, এতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অবশিষ্ট বিষয়সমূহের পরীক্ষা কখন শুরু হবে পুরো অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে শিক্ষার্থীরা,আবার ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ণ কার্যক্রম শুরু হয়ে মাঝপথে থেমে আছে,১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা প্রায় আসন্ন, কোন ক্লাস হচ্ছে না, ১ম থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ষান্মাসিক পরীক্ষা থেমে আছে।এমতাবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া খুবই জরুরি। অন্যদিকে আন্দোলনে জনধিকৃত পুলিশ রোষানলে পড়ে আন্দোলন উত্তর থানা ভাঙচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কর্মবিরতি পালন করছে। নবনিযুক্ত আইজিপি এখন পর্যন্ত পুলিশকে শৃঙ্খল কোন দৃশ্যমান জায়গায় নিয়ে আসতে পারেনি।ফলে রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলায় অনিবার্য পুলিশদের অনুপস্থিতি জনজীবনে নানামুখী চাপ সৃষ্টি করছে।অবশ্য সাধারণ পুলিশ সদস্যরাই এখন বলতে শুনছি,’ আমরা আর রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে চাইনা,আমরা জনতার সেবক পুলিশ হতে চাই’। হয়তো সার্বিক দিক বিবেচনায় পুলিশ সংশ্লিষ্ট জন খুব সহসা তাদেরকে একটা আস্থার জায়গায় নিয়ে আসবেন, সেটাও কবে,সরকারকে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুলিশের এমন কর্মবিরতিতে আমাদের বীর ছাত্ররা সেই শূন্যস্থান পূরণের অংশ হিসেবে রাস্তায় ট্রাফিক এর কাজ করছেন কয়টা দিন ধরে।এ কাজে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীই বেশী দেখা যায়। প্রশ্ন হলো এটা কি ছাত্রদের কাজ? বুঝলাম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা করছে কিন্তু কতদিন? এদের পড়াশোনা নেই? আমি মনে করছি, এহেন দায়িত্ব নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যতদ্রুত সম্ভব পুলিশকে পরিশুদ্ধ করে অর্পিত জায়গায় অবিলম্বে পদায়ন করে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুততম সময়ে খুলে দেয়ার একটা নির্দিষ্ট টাইম দিতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশের প্রায় ৫ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক, জুলাই – ২০২৪ এর বেতন এখনও উত্তোলন করতে পারেনি বা কবে নাগাদ পারবে? তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এর মূল কারণ হচ্ছে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৯৯ ভাগ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। ০৫ আগষ্ট ২০২৪ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার সম্মিলিত ইস্পাত কঠিন আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীরাও পালিয়ে যায়। ফলে উক্ত কমিটির সভাপতি/ চেয়ারম্যান এর শূন্যতায় স্বাক্ষরের জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জুলাই – ২০২৪ এর বেতন উত্তোলন জটিলতা দেখা দিয়েছে।দৈনন্দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায়ও নানাবিধ সমস্যার উদ্রেক ঘটেছে। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে শিক্ষকরা অনেক দুঃখকষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। দলীয়করণ জটিলতায় অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধানও গা ঢাকা দিয়েছে। যত বিপদ এখন লক্ষ লক্ষ সাধারণ শিক্ষকের। এ সমস্যা উত্তরণে, একটাই পথ বিদ্যমান কমিটি ভেঙে দিয়ে মহানগরীর ক্ষেত্রে বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা পর্যায়ে জেলাপ্রশাসককে সভাপতি করে আপদকালীন অস্থায়ী নতুন কমিটি করে দিতে হবে। এতে লাখো শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিক কষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে।তাই অবিলম্বে সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান কমিটি ভেঙে দিয়ে তদস্থলে নতুন অস্থায়ী কমিটি করার আশু প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।
এবার আসা যাক, কোটি কোটি টাকা ব্যায়ের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম। পড়াশোনা ও পরীক্ষা বিমুখ এ কারিকুলামে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও বিজ্ঞজন সবাই এ কারিকুলাম নিয়ো নেতিবাচক সমালোচনার ঝড় তুল্লেও বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে বেমানান এ শিক্ষাক্রম নিয়ে কোন কথা বলা যাবেনা মর্মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জুজুর ভয় দেখিয়ে শাসিয়ে রাখা হতো।এ কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা একইবারে গোল্লায় গেছে কিন্তু কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি। আজ স্বৈরশাসক এর পতনের মধ্য দিয়ে সামগ্রিক বিবেচনায় সহজে অনুমেয়, ” শেখ হাসিনা জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন একটা কারিকুলাম আমাদানি করেন।বিশ্লেষকদের মতে একটা জাতিকে পঙ্গু করে দিতে যুদ্ধের প্রয়োজন হয়না,যদি ঐ জাতিকে শিক্ষা আর অর্থে ধ্বংস করে দেয়া যায়। বৈষম্য বিরোধী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হাসিনার আমদানিকৃত বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম বাদ করে দিয়ে অধুনালুপ্ত সৃজনশীল কারিকুলাম পুনরায় চালুকরার আহ্বান জানাচ্ছি অথবা একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করে আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি সমৃদ্ধ যুগোপযোগী কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। যা নতুন বাংলাদেশ গড়ার দীপ্ত শপথে এগিয়ে যাবে এবং যুক্ত হবে পরীক্ষা নেয়ার পদ্ধতি। তবেই শিক্ষার্থীরা নতুন আলোয় উদ্ভাসিত হবে, খুঁজে পাবে হারানো পথ।
লেখক: মহাসচিব, গণতান্ত্রিক শিক্ষক শক্তি।