
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
পবিত্র ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠতে শুরু করেছে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন পশুর হাট। এসব হাটে এখন প্রাধান্য পাচ্ছে দেশীয় খামার ও গৃহস্থবাড়িতে লালিত গরু। তবে ভারতীয় গরুর আমদানি কম থাকলেও হাটে গরু-ছাগলের সরবরাহ বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় হতাশ খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
সীমান্তবর্তী উত্তরাঞ্চলের এই জেলার পাঁচটি উপজেলার সাপ্তাহিক পশুর হাটগুলো এখন গবাদিপশু ক্রয়-বিক্রয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই হাটগুলো জেলার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার দুড়াকুটিহাট, নবাবেরহাট (বিডিআরহাট), সাপটানা (নয়ারহাট), বড়বাড়ীহাট ছাড়াও উল্লেখযোগ্য হাটের মধ্যে রয়েছে পাটগ্রামের রসুলগঞ্জহাট, হাতীবান্ধার বড়খাতাহাট ও দইখোওয়া হাট, কালীগঞ্জের কাকিনাহাট ও চাপারহাট এবং আদিতমারীর সাপ্টিবাড়ীহাট। এসব হাটে ইতোমধ্যেই কোরবানির পশু উঠতে শুরু করেছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনাহাট ও চাপারহাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতা কম। অনেক গরু হাটে এলেও বিক্রি তেমন হচ্ছে না। বিক্রেতারা বলছেন, দেশীয় গরুর চাহিদা বেশি থাকলেও ক্রেতারা এখনই গরু কিনতে আগ্রহী নন। তারা হাট ঘুরে শুধু দাম যাচাই করছেন।
আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের খামারি আবু বকর সিদ্দিক জানান, “একটা গরু মোটাতাজা করতে অনেক পরিশ্রম ও খরচ লাগে। খাবারের দামও অনেক বেড়েছে। কিন্তু হাটে ঠিকমতো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর যে ষাঁড় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি, এবার তিনটি ষাঁড় প্রস্তুত করেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছি না।”
হাট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর আমদানি নেই বললেই চলে। ফলে দেশীয় গরুর ওপরই নির্ভর করছে কোরবানির পশুর বাজার। তবে আগের কয়েক বছরের লোকসানের অভিজ্ঞতা থাকায় অনেক খামারিই এবার বড় পরিসরে খামার করেননি। ফলে স্থানীয় গৃহস্থদের পালন করা গরুই এবার হাটে ভরসা হয়ে উঠেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৭৭৭টি হলেও প্রস্তুত রয়েছে ২ লক্ষ ৬২ হাজার ৬৩১টি পশু। এতে দেখা যাচ্ছে, জেলার চাহিদার তুলনায় প্রায় ৯০ হাজার ৮৫৪টি পশু বেশি রয়েছে। ফলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে অন্যান্য জেলায় সরবরাহের সুযোগ রয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে পশু কিনে নিয়ে যেতেন। এবার সেই উপস্থিতি একেবারেই কম। তাই সরবরাহ থাকলেও বাজারে তেমন চাহিদা নেই, দামও মিলছে না।
হাট ইজারাদাররা জানান, পাইকারদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছেন তারা। এবার হাটগুলোতে ভারতীয় গরু-মহিষের আমদানি একেবারেই নেই, তাই দেশীয় গরুর চাহিদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এছাড়া হাটে সঠিক নিয়মে টোল আদায় হচ্ছে, তবে অতিরিক্ত ভিড় এখনো হয়নি।