
আমার কাগজ ডেস্ক
নেপালে দুর্নীতিবিরোধী ভয়াবহ বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর প্রেসিডেন্টের কাছে ভেঙে দেওয়া সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন – ইউএমএল এবং মাওবাদী সেন্টারসহ আটটি দল এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌডেল অসাংবিধানিক আচরণ করছেন।
নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির পরামর্শে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট পৌডেল হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ ভেঙে দেন।
এটিও সরকার বিরােধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল।
ফেসবুকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিষিদ্ধের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে সংঘটিত গণবিক্ষোভের সময় দাঙ্গা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়।
বিক্ষোভকারী নেতাদের সাথে এক চুক্তির পর মিজ কারকিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সোমবার মধ্যরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল কিন্তু ততক্ষণে এই বিক্ষোভ গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।
ক্ষুব্ধ জনগণ মঙ্গলবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে সংসদ এবং সরকারি ভবনগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এখন নতুন করে সংসদ পুনর্বহালের দাবিতে শনিবার দেওয়া বিবৃতিতে আটটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হুইপ স্বাক্ষর করেছেন।
তারা যুক্তি দিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা অসাংবিধানিক এবং নেপালের বিচার বিভাগের প্রতিষ্ঠিত নজিরগুলোর বিরুদ্ধে।
ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
বহুল পরিচিত ‘জেন-জি’দের বিক্ষোভের ছাত্রনেতাদের একটি প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।
কিন্তু আটটি রাজনৈতিক দলের জােট বলছে, বিক্ষোভকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে আগামী বছরের পাঁচই মার্চের জন্য ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনও অন্তর্ভূক্ত।
তবে তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।
পরে শনিবার প্রেসিডেন্ট পৌডেল সকল পক্ষকে সংযম প্রদর্শন এবং নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করার আহ্বান জানান।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “খুব কঠিন এবং ভীতিকর পরিস্থিতিতে” একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান অর্জিত হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, “সংবিধান কার্যকর আছে, সংসদীয় ব্যবস্থা কার্যকর এবং ফেডারেল গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এখনও বিদ্যমান। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা করে জনগণের কাছে আরও দক্ষ গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।”
সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ৭৩ বছর বয়সী মিজ কারকিই প্রথম মহিলা, যিনি হিমালয়ান এই জাতিকে নেতৃত্ব দিতে কাঠমান্ডুতে এক সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণ করেন।
আশা করা হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি তার মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের নিয়োগ করবেন।
মিজ কারকিকে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘জেন-জি’ আন্দোলনের ছাত্র নেতারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে তার নেতৃত্বকে সমর্থন করছেন।
এর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, সংসদ ও হামলার শিকার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবন পুনর্নির্মাণ, পরিবর্তন চাওয়া জেন-জি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করা এবং অন্যান্যদের যারা এই ভেবে শঙ্কিত যে, নেপালের নবীন গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা লাইনচ্যুত হতে পারে।
সহিংসতার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অস্থিরতার পর নেপাল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। কাঠমান্ডুর রাস্তায় টহল দেওয়ার জন্য নেপালের যে সেনাদের মোতায়েন করা হয়েছিল, তারা মিজ কারকির শপথ গ্রহণের পর ঘাঁটিতে ফিরছেন।
গত সপ্তাহে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে এই বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু শিগগিরই তা নেপালের ‘রাজনৈতিক এলিট’দের বিরুদ্ধে গভীর অসন্তোষের সৃষ্টি করে।
সরকারি এই নিষেধাজ্ঞার আগের সপ্তাহগুলোতে, রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে একটি ‘নেপো কিড’ প্রচারণা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
পরে গত সোমবার রাতে তড়িঘড়ি করে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও ততক্ষণে নেপাল জুড়ে এই আন্দোলন দুর্বার গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করার পরেও রাস্তায় বিক্ষােভ চালিয়ে যাচ্ছিল আন্দােলনকারীরা।
পরে নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানোর চেষ্টা চলছে নেপালে।
যদিও প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পরই দেশের বেশিরভাগ অংশে আরোপিত কারফিউ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে, কাঠমান্ডুর কিছু জায়গায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে। জেলা প্রশাসন কাঠমান্ডুর সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার পর একটা বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে।কাঠমান্ডুতে গণপরিবহন চালু হয়েছেছবির ক্যাপশান,কাঠমান্ডুতে গণপরিবহন চালু হয়েছে
এর আগে নেপাল সেনাবাহিনী কাঠমান্ডু উপত্যকায় যে কারফিউ জারি করেছিল তা শনিবার সকাল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। কাঠমান্ডুর ছয়টা স্থানে জমায়েত এবং অনশন, ধর্মঘট, অবস্থান, ঘেরাও, বিক্ষোভ এবং সভা আপাতত নিষিদ্ধ থাকবে।
সিংহ দরবার, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অন্যদিকে, বিক্ষোভের কারণে গত পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর কাঠমান্ডুতে গণপরিবহন পুনরায় চালু হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের পরেও বেঁচে যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যান্য দফতর প্রস্তুতির কাজ।
ধারণা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি বিক্ষোভের সময় আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন শনিবার।
ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার এবং সিভিল সার্ভিস হাসপাতালে পৌঁছান শনিবার সকালে। হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আহতদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি।
অন্যদিকে, বিক্ষোভের সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সামগ্রী পুরনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন অফিসে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় সিংহ দরবারে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদের কার্যালয় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সিংহ দরবারের উত্তর-পশ্চিম অংশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্মিত নতুন ভবনে তার কার্যালয় প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সেনাবাহিনী সহ এবং সেখানে মোতায়েন কর্মীরা অগ্নিকান্ড থেকে থেকে বেঁচে যাওয়া আসবাবপত্র এবং সরঞ্জাম, যেমন টেবিল, চেয়ার, সোফা এবং কম্পিউটার, পুরানো অফিস থেকে নতুন কার্যালয়ে স্থানান্তরিত করেছেন।