আমার কাগজ প্রতিবেদক
বাংলাদেশে চলমান বন্যায় ১১টি জেলায় ৪৫ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
আজ শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারে ব্যাপক বন্যাসহ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি আরো জানান, সংকট মোকাবিলায় সরকার তিন হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। এসব কেন্দ্রে এক লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দিতে ৬৩৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
এরই মধ্যে বন্যায় আক্রান্তদের সার্বিক সহায়তার কথা জানিয়েছেন অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টারা। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বন্যাদুর্গতদের দুর্দশা প্রশমনে সহায়তা করতে উপদেষ্টারা সব বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পক্ষ থেকে মনিটরিং সেল চালু করা হয়েছে। এ জন্য সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা ছাড়াও তথ্য ও সহযোগিতার জন্য টেলিফোন ও মুঠোফোন চালুর কথা জানানো হয়েছে। সর্বোপরি বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোর জেলা প্রশাসককে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে সমন্বয় করে এক সাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তবে এসব উদ্যোগ ও ঘোষণা বন্যাদুর্গতদের কতটুকু সহায়ক হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ের প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় জানা গেছে, প্রশাসন কিংবা স্বেচ্ছাসেবকদের উদ্যোগে কোথাও কোথাও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। দেখা যায়, সমন্বয় না থাকায় বন্যাদুর্গত এলাকার কোথাও ত্রাণ বিতরণ নিয়ে হুলোস্থুল হচ্ছে। আবার অনেক এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি। অন্যদিকে কোথায় কি প্রয়োজন, সেটি যাচাই না করার কারণে অনেককে প্রয়োজনীয় পণ্যের কারণে দিনের পর দিন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচে বেশি উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে, দায়িত্ববানদের দায়িত্বহীন মনোভাবে অনেক স্থানে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে। এমনকি বন্যা দুর্গতদের সহায়তা ও ত্রাণ বিতরণে কন্ট্রোল রুম খোলা এবং টেলিফোন ও মুঠোফোন চালুর কথা বলা হলেও সেসবও অচল হয়ে থাকে বলে অভিযোগ মিলেছে। বন্যায় আক্রান্ত এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যেও এর চিত্র মিলেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিস্তর অভিযোগের ছড়াছড়ি দেখা যায়।
জানা গেছে, দুর্ভোগের সময় কোনো কোনো জেলা পর্যায়ের প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার চেহারাও সহজে দেখা মিলে না। টেলিফোন করেও তাদের পাওয়া যায় না। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কেন্দ্র থেকে সরকার যেসব উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, মাঠ পর্যায়ে সেটির বাস্তবায়ন কতটুকু হচ্ছে তা মনিটর না হবার কারণেই এ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের সব বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এর পাশাপাশি একটি উচ্চ পর্যায়ের কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন জরুরি। অন্তত চারজন উপদেষ্টা ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের চারজন সচিবকে সম্পৃক্ত করে এ সেল গঠন করে তাদের জেলাওয়ারী দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এতে করে বন্যাকালীন সহায়তা এবং পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমে গতি ফেরা ছাড়াও অনিয়মের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে পর্যবেক্ষকদের অভিমত।