
আমার কাগজ প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও ভারতে চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রথম পুলিশ সপ্তাহ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৯ এপ্রিল। এবার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ (বিপিএম) ও ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ (পিপিএম) পাচ্ছেন ৪০ পুলিশ সদস্য। সরকারের কাছে পুলিশ সদস্যরা সুনির্দিষ্ট ৬টি দাবি পেশ করবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনবান্ধব পুলিশ গড়তে যেমন বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনি শুধু পুলিশ সংস্কারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী পুলিশকে জনবান্ধব করার উদ্যোগও নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া পুলিশ সপ্তাহ হবে মাত্র তিনদিনের। এবার দাবি-দাওয়ার পসরাও থাকছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ও দুজন ডিআইজি এসব পদক ও দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি ও এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ৬টি দাবি তুলে ধরা হবে।
সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি জানানো হয়েছিল। কয়েক দফা বৈঠক শেষে তার মধ্য থেকে ৬টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কী হবে; সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশকে স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড থাকছে না।
প্রধান অতিথি হিসেবে তিনদিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনিই ৪০ পুলিশ সদস্যকে বিপিএম-পিপিএম পদক পরিয়ে দেবেন।
আরো জানা গেছে, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা থাকছে পুলিশ সপ্তাহে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন বসছে না। থাকছে না প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো সেশন।
যে ছয় দফা দাবি পেশ করবে পুলিশ
১. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি।
২. এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা।
৩. স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন।
৪. পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা।
৫. একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া (কনস্টেবল হতে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)।
৬. মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া।
এ বিষয়ে ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন হতো। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হচ্ছে। এবারই প্রথম বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে পুলিশের নীতি-নির্ধারকদের নিয়ে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন থাকছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তাছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
পদকের ব্যাপারে জানা গেছে, এখন থেকে সারা বছরই সাহসিকতা ও পেশাদারি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং নগদ আর্থিক প্রণোদনাও প্রদান করা হবে। পুলিশ সপ্তাহে শুধু পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।
তিন দিনের অনুষ্ঠান সূচিতে যা থাকছে
প্রথমদিন : পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল উদ্বোধন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনার উপর ওয়ার্কশপ হবে। এসবির (বিশেষ শাখা) কার্যক্রমের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন হবে।
দ্বিতীয় দিন : পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সম্মেলন হবে। সিআইডি, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, এটিইউসহ পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে পৃথক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। প্রতিটি ইউনিট তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উপস্থাপন করবে।
শেষ দিন : পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মতবিনিময় করবেন। পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলা হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে পূর্ণমিলনী ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারণ সভা হবে।