
আমার কাগজ প্রতিবেদক
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে নার্সদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকা দরকার বলে মনে করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার৷
তার কথায়, “আমাদেরকে অবশ্যই বাংলাদেশ একটা শক্তিশালী পাবলিক সেক্টর মানে গণবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা পরিষদ গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সত্যিকারের উন্নত করতে হলে এই ব্যবস্থার মধ্যে অবশ্যই নার্সদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে।”
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) আয়োজনে ‘পার সম্ভাবনার নার্সিং পেশা, বৈষম্য-প্রতিবন্ধকতা-হতাশা, সরকার ও প্রশাসনের দায় ও সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন৷
ফরহাদ মজহার বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে তাকালে আপনি দেখবেন ৬৭ শতাংশ নন কমিউনিকেবল ডিজিজ। এটাকে ঠেকাতে হলে নার্সদের ভূমিকা সবচেয়ে প্রধান।
“সেটা কী, খাদ্য সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দেওয়া। চলাফেরা সম্পর্কে সঠিক পরামর্শ দেওয়া। ব্যায়াম ঠিকমতো করা। পরিবেশকে সুন্দর রাখা, বিষ যেন না খায়, এটা ঠিক করা।”
তিনি বলেন, “এসব পরামর্শ দেওয়া শেষ অবধি নার্সদেরই কাজ। তারাই এই স্বাস্থ্যটাকে রক্ষা করে। তার মানে ৬৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী- তার যে স্বাস্থ্যসেবা, তার দায়িত্ব কার্যত নার্সদের ওপর। কারণ ওষুধ দিয়ে এটাকে ভালো করতে পারবে না।”
নার্সিং ব্যবস্থাকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত করার দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, “স্বাস্থ্য বলতে যে ডাক্তার বোঝায়, এটা ভুল চিন্তা। এটাও আসছে আধুনিক কালে, তার আগে ছিল না।
“যখন বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো তৈরি হয়েছে, বড় বড় প্রাইভেট হাসপাতাল যখন তৈরি হয়েছে, তখনই তারা স্বাস্থ্য বলতে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রেসক্রিপশন তৈরি করা, স্পেশালাইজড ডাক্তার, সেই ডাক্তার বিশেষ কোম্পানির প্রেসক্রিপশন লিখবে।”
চিকিৎসকদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “ডাক্তাররা কিন্তু ফেরেশতা না। এখনো বাংলাদেশের ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশন লিখে, তার অধিকাংশ কোম্পানি যেটা বলে ওটা।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ওষুধপত্রের দাম। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওষুধের দাম মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে। কারণ কোম্পানিগুলো (খাত) নিয়ন্ত্রণ করে। প্রাইভেটাইজেশন যখন শুরু হয়েছে আশির দশকে, এটাই তো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষতির কারণ।”
স্বাস্থ্যখাতের বেসরকারিকরণের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যখনই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আপনি কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিয়েছেন, তখন নার্স তাদের কাছে শ্রমিক ছাড়া কিছু না।
“ফলে প্রাইভেট সেক্টর আমাদের জন্য, নার্সদের জন্য কখনোই ইতিবাচক হতে পারে না। আমি প্রাইভেট সেক্টরের বিপক্ষে না, কিন্তু এটা কখনোই ইতিবাচক হতে পারে না।”
নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, যথাযথ পেশাগত সম্মান দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, “পেশা হিসেবে নার্সিংটা অত্যন্ত মহৎ একটি পেশা এবং নার্সিং পেশার বিকাশ ছাড়া আমরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারব না।”
আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বিএনএর মহাসচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম।
সভায় নার্সিং পেশার সম্ভাবনা, বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক জরিনা খাতুন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।