
মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস বর্তমানে একটি দুর্নীতিপরায়ণ দপ্তরে রূপ নিয়েছে। এই অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা শাহজাহান সিরাজী ভূমি সেবাপ্রত্যাশীদের থেকে ঘুষ আদায় এবং সরকারি অফিস নিজ ছেলে ও তার বন্ধুকে দিয়ে সরকারি অফিস পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহান সিরাজী সরকারি অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন নিজের ছেলে ও ছেলের বন্ধুর মাধ্যমে। গ্রাহকদের আবেদন শুধুমাত্র অফিসের নির্দিষ্ট কম্পিউটার থেকেই গ্রহণ করা হয়। বাইরের কম্পিউটার বা নিজস্বভাবে আবেদন করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয় বলে জানান স্থানীয়রা। এ যেন পুরো সিস্টেমটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দুর্নীতিকে সহজলভ্য করে তোলা।
সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তুলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে বাড়তি টাকা নেয়া হচ্ছে। চুক্তির টাকা ছাড়া কোন ফাইলই নড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় না করার অভিযোগ বাপ ছেলের বিরুদ্ধে ।
সেবা নিতে আসা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একাধিক গ্রাহক জানান, অনিয়ম দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়েছে পিরিজপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস । অফিসটিতে টাকা ছাড়া কোন ধরনের কাজ হয় না । কাজের ধরন ও জমির পরিমাণ অনুযায়ী ঘুষের হার নির্ধারণ করে থাকেন শাহজাহান সিরাজী ও তার ছেলে । তবে আমলা, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকদের জন্য কিছুটা ছাড় আছে বলে জানাযায়।
তারা আরো বলেন জমির কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও টাকা না দিলে মাসের পর মাস নড়ে না কোন ফাইলপত্র। ফলে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিতে হয় । যার খারিজ বা নামজারি ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মূল্য ২ হাজার টাকা। এই কাজটি ইউনিয়ন উপ-সহকারী কর্মকর্তার ছেলে, ছেলের বন্ধু ও কিছু দলিল লেখকের মাধ্যমে হয়ে থাকে বলে স্থানীয়রা জানান ।
পিরিজপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা কাছম আলী জানান, তার বাড়ির খাজনা পরিশোধের জন্য ভূমি কর্মকর্তা শাহজাহান ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এর আগেও একটি জমি খারিজ করতে গিয়ে তাকে ৮ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শাহজাহান সিরাজীর বিরুদ্ধে এর আগেও দিলালপুর ইউনিয়নে দায়িত্ব পালনের সময় একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। ওই সময় তাকে অষ্টগ্রামে বদলি করা হয়। তবে পরে বড় অঙ্কের ঘুষ ও প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় নিজের বাড়ির পাশের ইউনিয়ন, পিরিজপুরে বদলি হয়ে আসেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে শাহজাহান সিরাজী বলেন, “আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। কাজের চাপ থাকায় মাঝে মাঝে ছেলেকে দিয়ে অফিসের কিছু কাজ করাই। জুন মাসে খাজনা আদায়ের জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার ও শনিবার অফিস খোলা রাখা হয় এবং সেই সময় আমার ছেলে ও তার বন্ধু অফিসে সহায়তা করেছে।”
এ বিষয়ে বাজিতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌমিতা গুহ ইভা বলেন, “তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ আমরা তদন্ত করে দেখছি। অফিসে ছেলেকে দিয়ে কাজ করানোর বিষয়টিও আমাদের নজরে এসেছে—এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।”
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে।