
আমার কাগজ প্রতিনিধি
তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে সারা বছর সেচের পানি নিতে প্রতি একর জমির জন্য সরকারি দর ৪৮০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কৃষককে দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। এ কারণে তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকার সুবিধাভোগী কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের দাবি, কৃষকদের কাছ থেকে কোনো বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। স্থানীয় সমিতির মাধ্যমে কৃষকরা সেচের পানির টাকা পরিশোধ করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এ বছর ছয় জেলা রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট এবং বগুড়ায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় এক লাখ কৃষক এক লাখ ২৩ হাজার ৫০০ একর জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল দিয়ে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতি একর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করতে ৪৮০ টাকা হারে সরকার পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে।
কৃষকরা জানান, স্থানীয় সমিতিগুলো একর প্রতি এক হাজার টাকা দরে কৃষকদের কাছ থেকে ১২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা আদায় করেছে। সমিতির নেতারা পাঁচ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারি ফি প্রদান করেছেন, কিন্তু অতিরিক্ত ছয় কোটি ৪২ লাখ ২৯ হাজার টাকা তাদের পকেটে ঢুকেছে।
ডিমলা উপজেলার ডিমলা গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৩০ বছর ধরে তিনি তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন। তিস্তার পানিতে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ কম হয়। সেচ প্রকল্প থেকে সারা বছর এক একর জমিতে পানি নিতে তাদের দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি দর ৪৮০ টাকা। বাড়তি ৫২০ টাকা কোথায় যায় সেটা তারা জানেন না।
একই গ্রামের আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে জানান, সরকারি দরের চেয়ে তারা একর প্রতি ৫২০ টাকা বেশি দিচ্ছেন। বাড়তি টাকা সমিতির নেতা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
তিনি জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্পটি চালুর আগে তাদের এলাকায় জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হতো না। এখন তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহার করে বাম্পার ফসল ফলাচ্ছেন।
আব্দুর রহিম বলেন, ‘তিস্তার পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে খরচ প্রায় ৩০ শতাংশ কম লাগে, আর ফসল উৎপাদন প্রায় ২০ শতাংশ বেশি হয়।’
ডিমলা গ্রামে তিস্তা সেচ প্রকল্পের গেটকিপার ও কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুস সামাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কৃষকরা সমিতির মাধ্যমে সেচের পানির টাকা পরিশোধ করেন। সমিতির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ করে সেচ এলাকার খাল পরিষ্কার ও নজরদারি করা হয়। এ কারণে কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়।’
‘সরকারকে নির্ধারিত দরে টাকা পরিশোধ করার পর বাড়তি টাকা সমিতির সদস্যদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়’, বলেন তিনি।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা নদীর ওপর তিস্তা ব্যারেজ। এটি দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প। ১৯৯০ সালে ব্যারেজটি উদ্বোধন করা হয় আর সেচ প্রকল্প চালু হয় ১৯৯২ সালে। তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ৭৮ জন গেটকিপার রয়েছেন। তারা জমিতে পানি সরবরাহ করতে কৃষকদের সহযোগিতা করেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সমিতি গঠন করা না হলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে বিশাল এলাকা মনিটর করা সম্ভব নয়। সমিতির নেতাকে সময়মত পানি সেচের টাকা পরিশোধ করতে হয়।’
‘কৃষকদের কাছ থেকে পানি সেচের জন্য অতিরিক্ত ফি নেওয়ার তথ্য আমার কাছে নেই। এখন পর্যন্ত কোনো কৃষক এ ব্যাপারে অভিযোগও করেননি’, বলেন তিনি।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী ডেইলি স্টারকে জানান, কৃষকদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নেওয়ার তথ্য তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।