গাইবান্ধা প্রতিনিধি
আর মাত্র সপ্তাহ দেড়েক বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। দিন যতই এগিয়ে আসছে, কুরবানিকে কেন্দ্র করে ততই ব্যস্ত হয়ে উঠছেন সারা দেশের খামার মালিক ও কৃষকরা। হাটে-বাজারে কুরবানিযোগ্য স্বাস্থ্যবান ও সুন্দর সব পশু তুলতে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সারা দেশের মতো এই মুহূর্তে কুরবানির হাওয়া বইছে উত্তরের জেলা গাইবান্ধাতেও। আসন্ন কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে এবার পুরো জেলায় বসতে যাচ্ছে ২৩টি স্থায়ী ও ২২টি অস্থায়ী হাট। আয়োজন করা হয়েছে ৮টি অনলাইন হাটেরও। আর হাট মাতাতে নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বড় করে তোলা গবাদিপশু নিয়ে এখন শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার খামারিরা। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে আদরের পশুগুলোর সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন বাহারি সব নামও। এরই মধ্যে আলোচনায় উঠে আসতে শুরু করেছে লাল বাদশাহ্, রাজা বাবু, কালা মানিকসহ বেশ কিছু বিশালাকার সুঠামদেহী গরু। ইতিমধ্যে শুরু হয়ে বেচাকেনাও। সব মিলিয়ে সপ্তাহ দেড়েক বাকি থাকতেই জমে উঠতে শুরু করেছে গাইবান্ধার কুরবানির হাটগুলো।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় ১৫ হাজার ৮২১ জন খামারি এবং কৃষকের কাছে এক লাখ ৩৮ হাজার ২৭৭টি পশু প্রস্তুত আছে এবার। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৫৮ হাজার ৭০০টি এবং ছাগল-ভেড়া আছে ৭৯ হাজার ৫৭৭টি। কুরবানির জন্য ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৭০টি পশুর চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত আছে ২১ হাজার ৫০৭টি পশু। আসন্ন কুরবানি ঈদকে ঘিরে এ বছর গাইবান্ধায় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পশু কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
গত কয়েক দিনে জেলার বেশ কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা যায়, ঈদের দিন ঘনিয়ে আসাতে এখন বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। এর মধ্যে আছে ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ার ভিটা গ্রামের লতা রানীর ৭৫০ কেজি ওজনের শাহীওয়াল ষাঁড় লাল বাদশাহ্, পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের খামারি হোসেন আলীর প্রায় ১২০০ কেজি ওজনের ফ্রিজিয়ান ষাঁড় রাজা বাবু, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার রামজীবন ইউনিয়নের বাজারপাড়া গ্রামের খামারি মহব্বত হোসেন সরদারের হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের ১৭০০ কেজি ওজনের ষাঁড় কালা মানিকসহ বাহারি নামের বেশ কয়েকটি গরু। বিশালাকার এই গরুগুলোর খামারিরা প্রথমে শখের বশে গরু কিনে লালন-পালন শুরু করলেও এখন প্রত্যেকেই প্রতিষ্ঠিত খামারি। বড় বড় গরু পরিচর্যার ব্যাপারে তারা জানালেন, গরুগুলোকে প্রতিদিন খৈল, ভূষি, কলাসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াতে হয়। গরমে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে গোয়ালঘরের চালে ভেজা চট বিছিয়ে ঘরে ফ্যান চালিয়ে রাখতে হয়। গোসল করাতে হয় দিনে ৩-৪ বার।
শাহীওয়াল ষাঁড় লাল বাদশাহ। লম্বায় প্রায় ৯ ফুট ২ ইঞ্চি আর উচ্চতায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। প্রায় ১৮ মণ ওজনের লাল বাদশাহর দাম ৭ লাখ টাকা চাইছেন খামারি লতা রানী। রাজা বাবুর উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। ৭ ফুট লম্বা ফ্রিজিয়ান ষাঁড়টির বুকের বেড় ৮ ফুট আর ওজন প্রায় ৩০ মণ। বিশালাকার কালো রঙের এই ষাঁড়টির দাম ৮ লাখ হাঁকছেন খামারি হোসেন আলী। জেলায় এবার দৃষ্টি কাড়ছে কালা মানিক নামে হলস্টেইন-ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের আরেকটি ষাঁড়। সাড়ে ৯ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট উচ্চতার এই ষাঁড়টির মালিক মহব্বত হোসেন সরদার। প্রায় ৪২ মণ ওজনের এ ষাঁড়টির দাম তিনি চাইছেন ১২ লাখ টাকা।
কথা হলো সদর উপজেলার বাদিয়াখালীর শান্তিনীড় খামারের মালিক মো. মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, খামারে তার কুরবানি উপযোগী দেশি জাতের ২২টি ষাঁড় আছে। দেশি ষাঁড়ের চাহিদা বেশি থাকায় খামারে প্রাকৃতিকভাবে ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন তিনি। গেল দুই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, গাইবান্ধার ১৬৫টি চর-দ্বীপচরের মানুষ অনেক আগে থেকেই গবাদিপশু পালনের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি এ খাতে মূল ভূ-খণ্ডের উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়ছে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও তাদের সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
তিনি জানান, এবার কুরবানির পশুর কোনো সংকট হবে না। মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মাধ্যমে পশুগুলোর নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে এবং খামারিদের সুবিধার্থে অনলাইনেও প্রচার চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কাজ করছে বিশেষ মেডিকেল টিম।