আমার কাগজ প্রতিবেদক
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বহুমুখী হুমকি দেখা দিয়েছে যা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে দেশে বিদেশে। সংবাদপত্র অফিসে হামলা, শত শত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা এবং সরকার কর্তৃক তিন দফায় সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলছে বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা চর্চায় কোনো বাধা দেবে না এবং ঢালাও মামলা সমর্থন করে না তারা। তবে নানাভাবে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকরা আক্রান্ত হওয়ায় গণমাধ্যম মালিকদের সংগঠন, সম্পাদক পরিষদ এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন উৎকণ্ঠা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সংবাদমাদ্যম বিবিসিকে বলেন, গত সরকারের সময় আমরা দেখেছি যে ওই সরকারের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে কথাই বলা যেতো না। তারা কোনো সমালোচনা সহ্য করতো না। এখন টেলিভিশনগুলো দেখেন এই অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা যারা পরের সরকার আসবে বলে তারা মনে করছে বিএনপি কিংবা জামায়াত, তাদের প্রচার প্রপাগান্ডা হচ্ছে এটাও সাংবাদিকতা হচ্ছে না।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
৫ই আগস্ট সরকার পতনের দিন মিরপুরে গুলিতে নিহত মো. ফজলুর হত্যামামলায় অজ্ঞাত দেড় থেকে দুশ এবং ১৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ভাসানটেক থানার ওই হত্যা মামলায় আসামিদের মধ্যে ২৫ জনই সাংবাদিক।
ওই মামলাটি হয় ঢাকার কাফরুল থানায়। এজাহারে উল্লেখ রয়েছে মো. ফজলু বিজয়োল্লাস করার সময় আসামিরা লোহার রড, চাপাতি দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে হত্যা করে। ভাসানটেক থানাধীন মিরপুর ১৪ নম্বর মোড়ে দিগন্ত ফিলিং স্টেশনের সামনে সন্ধ্যা সাতটার হামলার ঘটনা ঘটে।
দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের কর্মরত শাহনাজ শারমীন ওই হত্যা মামলার একজন আসামি। মামলার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, পাঁচই অগাস্ট সারাদিন তিনি লাইভ সম্প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এসেছে ওই সময় তিনি বঙ্গভবনের সামনে থেকে লাইভ রিপোর্টিং করেছেন।
তিনি বলেন, সময়টা খুব অদ্ভুত এবং আমাকে বিস্মিত করেছে কারণ ওই সময় আসলে বঙ্গভবনে আমি উপস্থিত ছিলাম। বঙ্গভবনের সামনে আমরা সব টেলিভিশন উপস্থিত ছিলাম। সেখান থেকে আমি লাইভ দিচ্ছিলাম। আমি রাত এগারোটার পরে ওখান থেকে ব্যাক করি অফিসে।
বিষয়টি নানাভাবে শঙ্কার কারণ হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন শারমীন। তিনি বলেন, মামলায় নাম ঝুলে আছে, আমি হয়রানি হবো না, এটা আমি কীসের ভিত্তিতে আমি এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত হবো। সেই জায়গায় আমার প্রতিদিনই শঙ্কা, আশঙ্কা বা প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। এটি আমাকে শঙ্কিত করে। এটি কি আমার কাজের গতিকে থামিয়ে দিচ্ছে না।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সংবাদপত্র, টিভি, অনলাইন নির্বিশেষে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় দেড়শ সাংবাদিক হত্যা মামলায় আসামি হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন অনেকে। হত্যামামলায় অন্তত পাঁচ জন সাংবাদিক কারাগারে আছেন।
সাংবাদিকদেরকে ঢালাও হত্যা মামলায় আসামি করা উদ্বেগজনক মনে করে সম্পাদক পরিষদ। পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বিবিসিকে বলেন, এটা স্বাধীন সাংবাদিকতার সম্পূর্ণভাবে পরিপন্থী। এখন বাংলাদেশ মনে হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থানে আছি, যেখানে সাংবাদিকরা খুনের আসামি। একশ চল্লিশ জনের কাছাকাছি খুনের আসামি হওয়া- এটা কি সম্ভব? এটা কি দেশের মানসম্মান উজ্জ্বল করছে? এটা দেশের ভাবমূর্তী উজ্জল করছে কীভাবে? তাহলে আমরা সাংবাদিকরা খুনের আসামি হয়ে গেলাম। আমি মনে করি যে এটা অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ। আমার ধারণা এটা প্রফেসর ইউনূস সরকারের পলিসিগত না।
অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল
অন্তর্বর্তী সরকার তিন দফায় সাংবাদিকদের স্থায়ী অস্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে। তথ্য অধিদপ্তরের কার্ড বাতিলের তালিকায় নাম আছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি’র ঢাকা ব্যুরো চিফ জুলহাস আলমের। এছাড়া বাতিলের তালিকায় নাম রয়েছে পেশাদার অনেক সাংবাদিকের নাম।
বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক তাইমুর রশীদের কার্ডটিও বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্মিত, অবাক এবং বিব্রত।
তাইমুর রশীদ জানান, ২০২২ সালে সেপ্টেম্বরের পর থেকে তার কার্ডটি আর নবায়ন করা হয়নি। তিনি দুই পন্থী কোনো সাংবাদিক ইউনিয়নেরও মেম্বার নন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, এখানে যাচাই বাছাইটা আরো সতর্ক এবং পরিশীলিত এবং আরো বেশি সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ ছিল। আপনি আমার নাম টানছেন, কেন নাম আনছেন, কারণটা কী? আমি কি অবৈধ কাজে জড়িত ছিলাম কি না। যেইটা আমরা বার বার বলছি যে ফ্যাসিস্ট সরকারকে কী সুবিধা আমি দিয়েছি বা কী সুবিধা আমি নিয়েছি। যখন হঠাৎ করে এ ধরনের একটি তালিকায় নাম আসে তখনতো এটা অবশ্যই বিব্রতকর।
তাইমুর রশীদ বলেন, এটাতো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে গত পনেরো-ষোলো বছরে সাংবাদিকতার নামে চরম চাটুকারিতা তারপর ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের প্রতিযোগিতা চলেছে এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদেরকে চিহ্নিত করতে গিয়ে আবার একেবারে সবাইকে এক কাতারে আনা উচিত নয়।
তবে এভাবে কোনো কারণ উল্লেখ না করে দেড় শতাধিক সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয় এবং বিষয়টি উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, এটা খুব নিন্দার চোখে দেখি। এই দুইটা পদক্ষেপ একটা হলো- ঢালাওভাবে খুনের মামলা, আরেকটা হলো এরকম একশ সাতষট্টি জনের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হলো, দুইটাই স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, এখন বলা হচ্ছে এটাতো সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে কিছু না। সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের একটা বাধা। তো আপনি সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ করছেন না বাট সেক্রেটারিয়েটে প্রবেশ বন্ধ করছেন তো এটাতো সাংবাদিকতার ওপর একটা প্রভাব। আমার বিট আছে না? বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যেতে হয় তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আপনি কেন একটা সাংবাদিকতার একসেস বাধা দিবেন অথবা ক্যানসেল করবেন।
অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করার কিন্তু একটা নীতিমালা আছে। যদি আপনি এই এই কাজ যদি করে থাকেন আপনার কার্ড বাতিল হবে। আপনি ঢালাওভাবে করলেন, আজ অব্দি একটা কারণ দেখালেন না। একটা কথা শুনলাম না কেন বাতিল হইছে। আমি মনে করি এটা আরেক ধরনের সাংবাদিকদের লেবেলিং করা হচ্ছে। যে এরা অতীত সরকারের সঙ্গে জড়িত ছিল নিশ্চয়ই ওরকম ছিল এটা ধারণার বশবর্তী হয়ে তাদের ক্যানসেল হয়েছে। এটা আমি মনে করি ইমিডিয়েটলি সরকারের রিভাইস করা উচিৎ।
আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্বেগ
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনায় সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি সংগঠন উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সম্প্রতি প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকার সামনে অবস্থান ঢাকার বাইরে অফিস ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছে সংগঠনগুলো। ইউনূস সরকার সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার পত্রিকার অফিসকে ঘিরে সংঘঠিত পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ২৭ নভেম্বর দেয়া বিবৃতিতে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) বলেছে এমন কর্মকাণ্ড স্বাধীন ‘সাংবাদিকতার পরিপন্থী এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’ একই বিবৃতিতে সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং হত্যা মামলার আসামি করা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গত তিন মাসে একাধিক বিবৃতি দিয়েছে। যেখানে আটক সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপার মুক্তি দাবি করা হয়েছে। এছাড়া কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) দশ নভেম্বর এক বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেছে ইউনূস সরকার বাংলাদেশে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করবে। সিপিজে তাদের বিবৃতিতে হত্যা মামলায় আটক সাংবাদিকরা যেন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ নিতে পারে সেটি নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করেছে।
সরকার কী বলছে?
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যামামলা এবং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল দুটি ইস্যু নিয়ে তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি বাংলা। হত্যামামলা নিয়ে তিনি বলেন, ঢালাও হত্যামামলায় সাংবাদিকদের আসামি করার বিষয়টি সরকার সমর্থন করছে না। নির্দোষ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান তথ্য উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে একটা কমিটি করেছি। আমরা আবেদন জানাতে বলেছি যারা মনে করছে যে তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হয়েছে। এখানে আবেদনও পড়েছে। আমরা সেই আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয়ের এটা সুপারিশ করবো। যাতে যাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক করা হয়েছে সেই মামলাগুলো থেকে যাতে তাদেরকে খারিজ করা হয় এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
কার্ড বাতিল নিয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, সাংবাদিকতা পরিচয়ে অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের কার্ড দেয়া হয়েছিল সেই সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বিগত সময়ে যথাযথভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে করা হয়নি। অতিরিক্ত সংখ্যায় এটা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে। অনেক দলীয় কর্মীকে দেয়া হয়েছে এবং এই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে এসে তারা নানা ধরনের অপকর্ম করেছে এই ধরনের প্রমাণও আছে। তো সেই অনুযায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডটা কমানোর সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি, তো সেটা বাতিল করা হয়েছে। সেটা আবার নবায়ন করা হবে আবার তারা পুনরায় আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকলে সেটা তাদেরকে আবার দেয়া হবে।
তথ্য উপদেষ্টা ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের মানদণ্ড যারা ফ্যাসিস্ট রেজিমের সঙ্গে জড়িত ছিল, গণহত্যায় নানাভাবে জড়িত ছিল, গণহত্যায় নানাভাবে বৈধতা দিয়েছে। বিভিন্ন সাংবাদিক কিন্তু আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক হিসেবেও কাজ করেছে। সেই জায়গায় তো তারা একেবারেই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সেই অপরাধ পাওয়া গেলে, সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলে আমরাতো তাদেরকে সাংবাদিক হিসেবে বিবেচনা করছি না।
তিনি বলেন, মূলত ফ্যাসিস্ট রেজিমের সঙ্গে যারা জড়িত, সেই জায়গা থেকে কিন্তু জনগণের নানা ধরনের ক্ষোভ আছে, অভিযোগ আছে। সেই জায়গা থেকে সরকার ব্যবস্থা নেবে। নানান ধরনের মামলা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে সাংবাদিকরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সরকারের সমালোচনার কারণে যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়, সেই বিষয়টা আমরা নিশ্চিত করতে চাই।
এদিকে গণমাধ্যমের অতীত ভূমিকা এবং সাংবাদিকদের ব্যক্তিস্বার্থে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দেয়ার বিষয়টি বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলেও অনেকে মনে করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা এবং গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা-বিশ্বাসে বড় সংকট তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম নিয়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সেটি কেন হলো সেটাও দেখতে হবে। তার মতে, গত বিশ পঁচিশ বছর ধরে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা একটা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের কাছে, পাঠকের কাছে, অডিয়েন্সের কাছে তার যে গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা এটা প্রবলভাবে ঝাঁকুনি খেয়েছে।
তিনি বলেন, গত পনের বিশ বছরে আমাদের যে সাংবাদিকতার চর্চা। তার ভেতরেও কিন্তু একটা বড় ধরনের গলদ ছিল। যে একটা সরকারের স্তাবকতা, সাইকোফ্যান্স (চাটুকার) হয়ে যাওয়া এবং স্তাবকতাকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সাবেক প্রধানমন্ত্রী যিনি ছিলেন, তার প্রেস কনফারেন্সগুলো আমরা দেখেছি। তো সবমিলিয়ে সাংবাদিকতার প্রতি যে মানুষের শ্রদ্ধাবোধ, গ্রহণযোগ্যতা সেটা কিন্তু একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল।
তিনি আরো বলেন, এই সাংবাদিকদের অনেকে দেখেছি প্লট নিয়েছে, ফ্ল্যাট নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার জন্য তারা কী না করেছে। তো সবমিলিয়ে কিন্তু একটা রাগ কিন্তু ছিল একটা ক্ষোভ কিন্তু ছিল। ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কিন্তু তার দায় এড়াতে পারে না।