আমার কাগজ প্রতিবেদক
গতকাল ১৪ আগস্ট দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘এক ভুক্তভোগীর বিবরণে গোপন বন্দিশালায় ৯৪ দিন’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত সুয়োমটোর বিষয়বস্তু উল্লেখ করা হলোঃ
প্রতিবেদন মতে, উত্তর-দক্ষিণে ছয় কদম। আর পূর্ব-পশ্চিমে চার কদম। এই হলো একটি কক্ষের আকার। ছাদ অনেক উঁচুতে। সেখানে সারাক্ষণ জ্বলে থাকে একটি বাতি। একটি ছোট খাটে বিছানা পাতা। পাশেই প্রস্রাব করার জন্য প্লাস্টিকের দুটি পাত্র রাখা। দেয়ালে দেয়ালে খোদাই করে নানা লেখা। কেউ লিখেছে পরিবারের ফোন নম্বর। খোঁজ জানানোর আকুতি। কেউ দাগ দিয়ে দিয়ে হিসাব করেছে বন্দিদশার দিনপঞ্জি। এমন একটি ঘরেই ৯৪ দিন কাটানোর কথা জানিয়েছেন সাবেক সেনা সদস্য মো. মুকুল হোসেন। তিনি বলেছেন, কেন তাঁকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, কেন রাখা হয়েছিল অমন ঘরে, তা আজও তিনি জানেন না। সরকার পরিবর্তনের পর ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় তাঁর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে তিনি এসেছিলেন প্রথম আলো পত্রিকা অফিসে। ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আশিস নামে তার এক বন্ধুর বাসা থেকে ৪ থেকে ৫ জন লোক রাত ১০-১১ তার মধ্যে অস্ত্রের মুখে মুকুলকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার উপর চালানো হয় নির্মম ও অমানবিক নির্যাতন। ঐ বছরের ১৮ মার্চ র্যাব সদর দপ্তরে আবেদন করেন মুকুলের স্ত্রী জিয়াসমিন। এরপর ১৫ মে ‘নিখোঁজের তিন মাস পর থানায় দিল র্যাব’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর কলাবাগান থানায় নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন মুকুল।
সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, আইনের আশ্রয়লাভ একটি সাংবিধানিক অধিকার। কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে থাকলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হওয়া উচিত কিন্তু কোনোপ্রকার গ্রেফতার না দেখিয়ে বিগত কয়েক বছরে বহু মানুষ অবৈধ আটক, নিখোঁজ ও গুমের শিকার হয়েছে মর্মে খবর পাওয়া যায়। বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষকে আটক রেখে নির্যাতন করার যে চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ধরনের অবৈধ আটক/গুমের প্রত্যকটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত মর্মে কমিশন মনে করে। এমতাবস্থায়, সেনা সদস্য মুকুল হোসেন যে অবৈধ আটকের শিকার হয়েছেন তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযু্ক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-কে বলা হয়েছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।