
আমার কাগজ ডেস্ক
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় আরও অন্তত ৭২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন এমন কিছু মানুষ, যারা খাদ্য সহায়তার জন্য বিভিন্ন বিতরণকেন্দ্রে অপেক্ষা করছিলেন।
মানবিক সংকটে জর্জরিত গাজায় প্রতিদিনই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। রোববার (২৯ জুন) রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার মেডিকেল সূত্রগুলো জানায়, রোববার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় কেবল গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। সাংবাদিক মুয়াত আল-কালহুত জানান, জেইতুন, সাবরা ও আল-জাওইয়া বাজার এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলার পর উত্তর গাজার আল-আহলি হাসপাতালে আহতদের ঢল নামে।
তিনি বলেন, “এখানে প্রচুর আহত মানুষ এসেছেন, যাদের মধ্যে অনেক শিশু। পর্যাপ্ত বেড বা চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই, অনেকেই মেঝেতে শুয়ে আছেন। হাসপাতালটি চরম সংকটে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, পূর্ব গাজা শহরে সাধারণ মানুষকে দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে লিফলেট ছড়ানো হলেও, এর পরপরই শুরু হচ্ছে ভারী বোমা হামলা। ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছেই।
রোববার নিহতদের মধ্যে রাফাহর উত্তরে খাদ্য বিতরণকেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনিও রয়েছেন। বিতরণকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ), যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানায়, মে মাসের শেষদিকে জিএইচএফ আংশিক সহায়তা বিতরণ শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই এসব কেন্দ্রে আসা মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছে। এতে এ পর্যন্ত ৫৮০ জনের বেশি নিহত ও চার হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ জানায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ইসরায়েলি সেনা স্বীকার করেছেন, নিরস্ত্র সহায়তা প্রত্যাশীদের ওপর গুলি ছুঁড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মানবিক সংকটে থাকা গাজায় পুষ্টিহীনতার কারণে শিশু ও নবজাতকের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
গাজা শহরের একটি হাসপাতালে কর্মরত অস্ট্রেলীয় স্বেচ্ছাসেবী নার্স ক্রিস্টি ব্ল্যাক বলেন, “আমাদের হাতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম নেই। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ফর্মুলা খাবার নেই বলেই অনেক মা বুকের দুধ উৎপাদনে অক্ষম হচ্ছেন। শিশুদের জন্য দুধের বিকল্পও নেই।”
তিনি জানান, শুধু গত কয়েকদিনেই অপুষ্টির কারণে একাধিক শিশু মারা গেছে। “আমরা এমন শিশুদের দেখছি, যাদের বয়স নয় বা দশ, কিন্তু দেখতে মনে হয় দুই বছরের মতো,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বোমা হামলায় সৃষ্ট ধুলা ও বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শিশুদের মধ্যে শ্বাসজনিত রোগ বেড়েই চলেছে।