
আমার কাগজ ডেস্ক
স্বর্ণের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে — প্রতি আউন্সে ৪,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ২,৯৮৫ পাউন্ড) ছাড়িয়ে গেছে। কারণ, বিনিয়োগকারীরা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা খুঁজছেন। ১৯৭০-এর দশকের পর এবারই স্বর্ণের সবচেয়ে বড় উত্থান দেখা গেছে। এপ্রিল থেকে এর দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। খবর-বিবিসি
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়ছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের শাটডাউনের (সরকারি কার্যক্রম স্থগিত) ফলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশে দেরি হচ্ছে। স্বর্ণ সাধারণত নিরাপদ আশ্রয় বা সেফ হেভেন বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাজারের অস্থিরতা বা অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও এর মূল্য ধরে রাখে বা বৃদ্ধি পায় বলে আশা করা হয়।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ভূ-রাজনৈতিক সংকটসহ নানা উদ্বেগের কারণে ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে স্বর্ণে বিনিয়োগ করছেন। এর ফলে, বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মূল্যবান এই ধাতুর দাম ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে গেছে।
এশিয়ার বাজারে বুধবার বিকেলে স্পট গোল্ডের (তাৎক্ষণিক ডেলিভারির জন্য স্বর্ণের বাস্তব সময়ের বাজারমূল্য) দাম প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ৩৬ ডলারেরও বেশি ছুঁয়েছে। স্বর্ণের ফিউচারস (ভবিষ্যতের নির্ধারিত তারিখে কেনাবেচার চুক্তি) একই দামে পৌঁছেছিল ৭ অক্টোবর। সাধারণত এই ফিউচারস চুক্তিগুলো বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি বোঝার সূচক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ওসিবিসি ব্যাংকের (OCBC) সিঙ্গাপুরভিত্তিক রেটস স্ট্র্যাটেজিস্ট ক্রিস্টোফার ওং বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কার্যক্রম বন্ধের (শাটডাউন) ফলে স্বর্ণের দামের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।
তিনি জানান, অতীতেও যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনের সময় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঝুঁকেছেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে এক মাসব্যাপী সরকার বন্ধের সময় স্বর্ণের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে মি. ওং সতর্ক করে বলেন, যদি এবার শাটডাউন দ্রুত শেষ হয়, তাহলে স্বর্ণের দাম কমতেও পারে।
ইউওবি ব্যাংকের (UOB) মার্কেট স্ট্র্যাটেজির প্রধান হেং কুন হাও বলেন, গত এক মাসে স্বর্ণের অভূতপূর্ব উত্থান বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তার মতে, এই উত্থানের পেছনে দুর্বল মার্কিন ডলার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের (রিটেইল ইনভেস্টর) স্বর্ণ কেনার প্রবণতাও ভূমিকা রেখেছে।
তবে সবাই স্বর্ণের বাস্তব ধাতু কেনেন না—অনেকে স্বর্ণ-সমর্থিত আর্থিক পণ্য, যেমন এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ETF)-এ বিনিয়োগ করেন। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত রেকর্ড ৬৪ বিলিয়ন ডলার স্বর্ণ-সমর্থিত ইটিএফে বিনিয়োগ হয়েছে।