আমার কাগজ প্রতিবেদক
বেসরকারি কলেজে নিয়োগপ্রাপ্ত অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের কষ্টের দিন যেন শেষ হয় না। দীর্ঘ একত্রিশ বছর যাবৎ এই শিক্ষকরা ‘শর্তের গ্যাঁড়াকলে’ সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের অপরাধ তারা অনার্সের শিক্ষক। অনার্সের শিক্ষকদের কোনো নীতিমালা নাই। তারা যখনই বেতনের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে তাদেরকে শর্তের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটা শর্ত দিয়ে কলেজে বিষয় খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। শর্তটি হচ্ছে, কলেজ থেকে জাতীয় স্কেলে বেতন দিতে হবে। আর শিক্ষকরা কখনো এমপিও দাবি করতে পারবে না। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ শর্তটি না মানলেও সে তদারকির ব্যবস্থা নেই। ফলে রাজধানীর হাতোগোণা কয়েকটি ছাড়া সারাদেশের কলেজগুলোতে জাতীয় স্কেল তো দূরের কথা, নামে মাত্র দুই হাজার, পাঁচ হাজার বা ছয় হাজার টাকা করে সম্মানী দেওয়া হয়। যা দিয়ে বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে কারো পক্ষে সংসার চলানো সম্ভব নয়।
অন্যদিকে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় ‘এমপিওভুক্তি’ দাবি না করার শর্ত । অথচ পরবর্তীতে সেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বহু নজির রয়েছে। একইভাবে ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদেরকেও নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানেও শর্ত, তারা কখনো এমপিও দাবি করতে পারবে না। পরে তারা এমপিওভুক্ত হয়ে যায়। শুধু মাত্র অনার্সের এই সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক একটা চুক্তির মধ্যে আটকে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষিকা বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় এসেছিলাম। ভেবেছিলাম কলেজে চাকরি করলে স্বামী, সন্তান ও সংসারে কোনো প্রভাব পড়বেনা। তিনি বলেন, আমার স্বামী একটা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছে। আমি নিজেও এসব নিয়ে চিন্তা করতে করতে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। ২/৩ মাস পর পর ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য যেতে হয়। ডাক্তারের কাছে গেলেই একবারে বিশ থেকে ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। এদিকে কলেজ থেকে যে সামান্য সম্মানী দেয় তা দিয়ে তো সংসারই ঠিক মতো চলে না। এরপর নিজের এবং স্বামীর চিকিৎসা কিভাবে করাব? তিনি বলেন, আপনাদের মাধ্যমে মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা কুমিরা মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞাণ বিভাগের প্রভাষক গৌতম মজুমদার বলেন, ‘আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নাই’।
সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক মিহির কুমার মন্ডল জানান, ‘সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি। দীর্ঘ একত্রিশ বছরের শ্রমদাস থেকে আমাদের মুক্তি দিন’।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের মাধ্যমে শিক্ষা সেক্টরের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ২০১০ এর পর বেসরকারি কলেজগুলোতে ঢালাওভাবে অনার্সে নিয়োগ ও বিষয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এর অধ্যায় ০৮, কৌশল – ০৬ বলা হয়েছে, “পর্যায়ক্রমে ডিগ্রি (পাস) কোর্স তুলে দিয়ে ৪ বছর মেয়াদি অনার্স (সন্মান) কোর্স চালু করা হবে। “এটা যদি সরকারের পলিসি বা শিক্ষানীতি হয় তাহলে কেন অনার্স – মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না? একই বিষয়ে দুই নীতির অবসানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।