
আমার কাগজ ডস্কে
বাংলাদেশের রপ্তানির শীর্ষ পাঁচ পণ্যের তালিকায় অনেক দিন ধরেই রয়েছে হোম টেক্সটাইল। করোনার পর ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত হিসেবে চমক দেখায় হোম টেক্সটাইল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গেলে বড় ধাক্কা খায় খাতটি। টানা দুই বছর রপ্তানি কমে যাওয়ার পর সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে হোম টেক্সটাইল রপ্তানি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে ৮৭ কোটি মার্কিন ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাকের মতো হোম টেক্সটাইলের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে হোম টেক্সটাইল রপ্তানির প্রায় ১৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল দেশটি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে বাড়তি ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে বাড়তি এই শুল্ক কার্যকর হবে। যদিও তিন মাস আগে সব দেশের পণ্য রপ্তানির ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেছে দেশটি। বর্তমানে বাড়তি ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছে।
বাড়তি ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক না কমলে যুক্তরাষ্ট্রের বড় বাজারে রপ্তানি ধসের শঙ্কা করছেন হোম টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, গ্যাসের অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ানো, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় বেশ পিছিয়ে পড়েছে। এখন প্রতিযোগী দেশের তুলনায় যদি পাল্টা শুল্ক ৫ শতাংশও বেশি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রয়াদেশ কমবে। তার প্রভাব ইউরোপের বাজারেও পড়বে।
হোম টেক্সটাইল পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, দরজা-জানালার পর্দা, কুশন ও বিভিন্ন ধরনের টেরিটাওয়েল। বিশ্বের ১৩১টি দেশে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা। হোম টেক্সটাইল খাতে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও বর্তমানে রপ্তানি করছে ৫০-৬০টি প্রতিষ্ঠান। সচল কারখানাগুলোতেও ক্রয়াদেশের অভাব রয়েছে।
১৯৯০ সাল থেকে হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত শামসুদ্দিন টাওয়েল। ফেনী বিসিকে অবস্থিত কারখানাটির মাসিক টাওয়েল উৎপাদন ক্ষমতা ৭০ টন। যদিও ক্রয়াদেশের অভাবে মাসে গড়ে ৪০ টন উৎপাদনসক্ষমতা অব্যবহৃত থাকছে। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাইনুদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত এপ্রিলে ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছেন। পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে না পারলে আমাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’
করোনার পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হোম টেক্সটাইলের রপ্তানিও ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৬ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়। ২০২১–২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬২ কোটি ডলারে। অবশ্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি কমে আসে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৫ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকার সমান।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএলএমইএ) সাবেক চেয়ারম্যান এম শাহাদাৎ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছর গ্যাস–সংকটের কারণে আমার নিজের কারখানা থেকে ১ মাস ২৩ দিন কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। মাসখানেক ধরে গ্যাস পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে পাল্টা শুল্ক নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশি পণ্যে পাল্টা শুল্ক ২-৩ শতাংশ বেশি হলেই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে যাবে।