
আমার কাগজ প্রতিবেদক
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ’ বা জাগৃক যেন দুর্নীতিবাজদের সেইফ জোন। একের পর এক দুর্নীতি-জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হবার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এমনকি মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত নির্দেশনা দেয়ার পরও নানা কৌশলে সেটি ধামাচাপার চেষ্টা চলে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ভূমি শাখায় কর্মরত অফিস সহকারী মোস্তফা কামাল শাহিনের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত ধামাচাপায় একই কায়দায় অপচেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, একের পর এক দুর্নীতি আর জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন অফিস সহকারী মোস্তফা কামাল শাহিন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে অনেক তথ্যের খোঁজও মিলেছে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে শাহিন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। অথচ তিন বছরেও সে মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। দেয়া হয়নি অভিযোগপত্র। প্লট জালিয়াতি কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জাল স্বাক্ষরসহ বহু অপকর্মে হাতেনাতে ধরাও পড়েছেন। তবে ক্ষমতার দাপটে বারবার তিনি ধরাছোয়ার বাইরে থেকেছেন। তার নিয়োগেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। সবচে বড় কথা, মোস্তফা কামাল শাহিন ছিলেন পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগী। নিজেকে বড় আওয়ামী লীগার পরিচয় দিয়েই ১৬ বছর ক্ষমতার ছড়ি ঘুরিয়েছেন। স্বঘোষিত সিবিএ নেতা বনে দেখিয়েছেন ক্ষমতার দাপট। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তার ক্ষমতায় হেরফের হয়নি। বরং কালো টাকার জোরে ঊর্ধ্বতনদের বশ করে বহাল তবিয়তে আছেন। আর এ অভিযোগ যে কোনো অতিরঞ্জিত নয়, সাম্প্রতিক ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে।
মোস্তফা কামাল শাহিনের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গত জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে দৈনিক আমার কাগজ পত্রিকায় চার পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় হয়। তবে এর আগেই মন্ত্রণালয়ে তার দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এ প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের নির্দেশনা পেয়ে তদন্ত কমিটি করে জাগৃক। মজার বিষয় হচ্ছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার দুই মাসের বেশি সময় পর গত ২৮ জানুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি করে অফিস আদেশ জারি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আহসান হাবিবকে। সদস্য দু’জন হলেন যথাক্রমে উপ-পরিচালক (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা-২) তায়েব-উর রহমান আশিক এবং সহকারী পরিচালক (অর্থ) মো. আরিফুজ্জামান।
উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও প্রশিক্ষণ) মো. মুশফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটি গঠন সংক্রান্ত চিঠিতে গত বছরের ১৭ নভেম্বর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠির উদ্ধৃতি দেয়া হয়। যার স্মারক নম্বর-২৫.০০.০০০০.০৫৩.০১.০০২.২৩.১৯০। চিঠিতে সূত্র হিসেবে এ স্মারক নম্বর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় ভূমি শাখায় কর্মরত অফিস সহকারী মোস্তফা কামাল শাহীন ও তার স্ত্রী মিসেস নাছরিন সুলতানাসহ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ফাইল গায়েব করা, ফাইল আটকে রেখে হয়রানি, ডিজিটাল নম্বরবিহীন জল কাগজ সৃজন করে লীজ দলিল রেজিস্ট্রিকরণ, নথি অফিসে সৃজন করাসহ শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ” এর বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্দেশক্রমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে পিলে চমকানো তথ্য হচ্ছে, নির্ধারিত ১৫ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও সেই তদন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দেয়নি। বরং আঁতুরঘরে সেটিকে সমাহিত করার তোড়জোড় চলছে।
অনুসন্ধানেও মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, তদন্ত কমিটি গঠনের কয়েকদিন পরই আহ্বায়ক পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আহসান হাবিবকে অন্যত্র বদলি করা হয়। অন্যদিকে কমিটির কাজের অগ্রগতি জানতে চাইলে সদস্য যথাক্রমে উপ-পরিচালক (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা-২) তায়েব-উর রহমান আশিক এবং সহকারী পরিচালক (অর্থ) মো. আরিফুজ্জামান কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং সহকারী পরিচালক (অর্থ) মো. আরিফুজ্জামান জানিয়েছেন চমকপ্রদ তথ্য। তার ভাষ্যানুযায়ী কমিটি গঠনের কথা মৌখিকভাবে জেনেছেন। কোনো লিখিত চিঠি পাননি। এর রহস্য অনুসন্ধানেও মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেছে, কমিটি গঠনের পরপরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের রুমে মোস্তফা কামাল শাহিনের যাতায়াত বেড়ে যায়। এরপরই অদৃশ্য কারণে সবকিছু ম্যানেজড হয়ে তদন্ত ধামাচাপার কৌশল নেয়া হয়।