
হাওরঅঞ্চল প্রতিনিধি
নিকলীতে দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত আগুনে বসত ঘর পুড়ে ছারখার। নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়ার পরে পরিকল্পিতভাবে আগুন দেয়া হয়েছে বলে ধারণা পরিবারের। এতে নগদ টাকাও স্বর্ণালংকারসহ আনুমানিক ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি পরিবারটির
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার গুরই ইউনিয়নের ছেত্রা উত্তরপাড়ার শেষ সীমান্তের হাওর এলাকার বিক্ষিপ্ত স্থানের বসতি নবকূলের পরিবারে ভয়াবহ আগুন। ঘটনাটি ঘটেছে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে। নবকূল ৫ কিলোমিটার কাছাকাছি দূরত্বের ছেত্রা কিলানী হাওরে নিজের ধানি জমিতে আগাছা পরিস্কারের কাজ করতে যান নুরকুল, রাইকুল, বিলকূল, লেয়াজ উদ্দিন ও চান মিয়ার সাথে।
সকাল প্রায় ১১ টার দিকে নবকূলকে পাশাপাশি এলাকার জয় বাংলা বাজার থেকে ইদ্রিস আলি ফোন করে জানান তাদের বাড়িতে আগুন লাগার কথা। কাছাকাছি স্থানের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও এ সময় সব পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। তবে সন্দেহের সৃষ্টি হয় ঘরে নগদ ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা আর ৮ আনা স্বর্ণসহ ৩ ভরি রূপার সাথে একটি প্লাস্টিকের ব্যাংককে বাহিরে দেখে। প্লাষ্টিকের ব্যাংকটিকে কাটা অবস্থায় ফেলে থাকতে দেখে বাহিরে। এই ব্যাংকে নবকূল ও তার পরিবার তিন বছর ধরেই টাকা জমা রাখছেন বলেও দাবি করেন। এই কিভাবে ব্যাংক বাহিরে এলো এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
স্থানীয়দের তথ্যমতে জানা গেছে নতুন করে রাস্তা সংলগ্ন জমিতে মাটি ভরাট করে তিন বছর ধরে নবকূল, আহমদ আলী, সিদ্দিক, চান মিয়া বসবাস করে চলেছেন। চাঁন মিয়া সম্পর্কে নবকূলের উকিল শ্যালক। তবে চাঁন মিয়া বন্ধকী থাকেন এই বাড়িতে। চান মিয়াও এক সাথেই কাজে ছিলেন বলে জানান নবকূল। সংলগ্ন ঘরের সিদ্দিকও এ সময়ে অন্যের জমিতে ধান রোপণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সিদ্দিকের স্ত্রী আল্লাদুও সেই সময়ে হাওরে অন্যের জমিতে মরিচ উত্তোলনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পাশের ঘরের আহমদও ১০ দিন ধরে বাড়ির বাহিরে মনোহরদীতে রয়েছেন। আহমদের স্ত্রী মাজেদা এ সময়ে অন্যের জমিতে মরিচ উত্তোলনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আগুন লাগার এক ঘন্টা আগে নবকূলের স্ত্রী নুরজাহান তার বাবার বাড়ি পাশ্ববর্তী উপজেলার ৪ কিলোমিটারের দৃরবর্তী দৌলতপুরে চলে যান দেড় বছরের এক মাত্র শিশু কন্যাকে নিয়ে। যাওয়ার আগে সব সময়ের মতো ঘরের চাবি চাঁন মিয়ার স্ত্রী রুপার কাছে দিয়ে যান। তবে আগুন লাগার সময়ে চাঁন মিয়ার স্ত্রী রূপা বাড়িতে থাকলেও সেই সময়ে দরজা লাগিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন বলে দাবি করেন। মানুষের ডাক চিৎকার শুনে তিনি ঘুম থেকে উঠেছেন বলেও উল্লেখ করেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু মিয়া বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে এসে আগুনে ঘর পুড়ার দৃশ্য দেখতে পান। তবে প্লাষ্টিকের ব্যাংক কাটা ও অক্ষত দেখে তার প্রাথমিকভাবে ধারণা হয়েছে এটা পরিকল্পিত আগুন। এছাড়াও বিদ্যুৎ ও মিটার সব কিছু ঠিক রয়েছে। সিলিন্ডারও অক্ষত অবস্থায়। বাকী সব আগুনে পুড়ে ছাই তাই বিষয়টি রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময়ে শত শত নারী ও পুরুষেরা আগুনে পুড়ে পরিবারটির একাধিক আলমারি, সুকেজ, খাটসহ পড়নের সব কাপড়সহ যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়ে যাওয়ায় আফসোস করেন। তবে সকলেই বিষয়টি রহস্যজনক বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে চলছেন।
নবকূল ও তার স্ত্রী নুরজাহানের ভাষ্য এটা পরিকল্পিত আগুন। নগদ ১ লক্ষ ৫ হাজার টাকা, ৮ আনা স্বর্ণ আর ৩ বড়ি ওজনের রুপার জিনিসের পাশে এই প্লাষ্টিকের ব্যাংকটি ছিল। এটা কিভাবে দুই টুকরো অবস্থায় বাহিরে এলো। এই কথা বলে বারবার কান্না করতে লাগলো। দলিলপত্রসহ সব পুড়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিনের সাথে কথা এই বিষয়ে কথা হলে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
নিকলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা পাপিয়া আক্তার বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকারা সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও এই ঘটনার বিষয়ে আরও অধিক খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলেও উল্লেখ করেন।