
হাওর অঞ্চল প্রতিনিধি
নিকলীতে ইউনিয়ন বিএনপির ক্লাবে ঢুকে দলীয় লোকদের উপর হামলা ও ভাংচুর করেছে বিতর্কিত এক বিএনপি নেতা। নেপথ্যে রয়েছে অসংখ্য আ’লীগ নেতাকর্মীরা। এমন অভিযোগ স্থানীয় বিএনপির শতশত নেতাকর্মীদের মাঝে। এই বিষয়ে নিকলী টু সরারচর মূল রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনের মধ্যে দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি ভাংচুর ও অফিস রুমের চেয়ার ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দীর্ঘ সময় ব্যাপী। মিছিল শেষে সমাপনী বক্তব্যও রাখেন বক্তারা। পাশাপাশি দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিও জানান।
জারইতলা ইউনিয়ন কৃষকদলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম শুক্কুর মিয়া, বিএনপি নেতা আক্কাস আলী, আনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম ও দীন ইসলাম। এছাড়াও প্রাক্তন ইউনিয়ন সভাপতি ওসমান গনি, সহ-সভাপতি কামরুল হাসান রিগন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাকির হোসেন, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মামুনসহ অনেকেই ইন্নছ আলী ও তার সাথে নেপথ্যে থাকা আ’লীগ নেতাকর্মী যারা জড়িত সকলের শাস্তির দাবি জানান। এ সময়ে অনেকে ইন্নছ আলীকে প্রকাশ্যে আ’লীগ দোসর বলেও উল্লেখ করেন।
গত ১২ জানুয়ারির ঘটনায় এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কার কথাও জানান স্থানীয়রা। রাতে অফিসে আক্রমণের ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিএনপি নেতা হবিকে নিকলী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দলীয়ভাবে মামলার প্রস্তুতির কথাও জানান নেতাকর্মীরা। নিকলী থানার ওসির ভাষ্য প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান। উপজেলা সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অফিস পরিদর্শন করে চলেছেন বলে জানা গেছে।
নিকলীর জারইতলাতে ২০০৯ সাল থেকে স্কুল মাঠে জেলার বৃহৎ গরুর হাট। হাটটি এলাকাবাসীর উদ্যোগে গড়ে উঠলেও এ হাট শুরু থেকেই আ’লীগ নেতাকমীদের দখলেও নেতৃত্বে ছিল। এটা আ’লীগ নেতাকর্মীদের হাট নয় যেনো টাকার গাছে পরিণত হয়েছিল। ইজারাদারসহ সকল প্রকারের পদে পর্যায়ক্রমে স্থানীয় আ’লীগ নেতাকর্মীরাই ছিলেন এর হর্তাকর্তা। এবার নতুন করে ইজারাদার নিয়োগের পূর্ব প্রস্তুতি নিতে গেলেই দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। ২০২৫ সালের ইজারাদার হতে চান বিতর্কিত বিএনপির নেতা ইন্নছ আলী। এ ক্ষেত্রে ইন্নছ আলীকে মেনে নিতে নারাজ বাকী বিএনপির প্রায় সকল নেতাকর্মীরা। বেশ কয়েকদিন ধরে গুপিরায় বাজারের বিএনপির দলীয় ক্লাবে এই বিষয়ে আলোচনা চলে। যথারীতি নিয়মে গত ১২ জানুয়ারি রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে পূর্বঘোষিত মিটিংয়ে দলীয় বিএনপির ক্লাবেই এই বিষয়ে আলোচনায় বসেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ সময়ে ইন্নছ আলীকে সরাসরি সমর্থন না দেওয়ায় এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয় ক্লাবের ভেতরেই। ক্লাবের সদস্য ও স্থানীয়রা জানান ইন্নছ আলীর ছেলে এরশাদও তার ভাই-ভাতিজা মিলে দা-চুরিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক পর্যায়ে গুপিরায় বাজারের ক্লাবের ভেতরে এসে প্রতিবাদকারীদের উপর খুন জখমের উদ্দেশ্যে আক্রমণ করে। ছবিসহ দলীয় অফিসের চেয়ারও ভাংচুরের ঘটনার পর ইন্নছ আলী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলে যায় যান কিভাবে ক্লাব চলে এটাও দেখে নিবে বলে। ঘটনার সময়ে এরশাদ লম্বা দা দিয়ে আঘাত করে জারইতলার ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি হবি মিয়াকে। একই সময়ে জারইতলা ইউনিয়ন বিএনপির সেচ্ছাসেবক বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাকেও আঘাত করে। এছাড়াও ক্লাবে অবস্থানরত ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন মিয়া, সদস্য জসীম, ইসমাইল, আছমত আলী, কুদ্দুস আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে কিলঘুষি ও টেনে হেঁচড়ে লাঞ্চিত ও অপদস্থ করে। পুনরায় সকালের দিকেও ভাংচুর করা হয়েছে বলে জানান নেতাকর্মীরা।
আঠার বাড়িয়া গরুর হাটের বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকেই এলাকায় আলোচনা ছিল ফান্ডের কোটি টাকা সমভাবে বিলি হয়েছে আলীগ নেতাকর্মীদের যোগসাজশে। এছাড়াও সাড়ে ১৮ লক্ষ টাকা এখনো আলীগ নেতাকর্মীদের হাতেই রয়েছে। যা উদ্ধার নিয়ে চলছে নানান টালবাহানা। টাকা উত্তোলন বিষয়ে জুড়ালো ভূমিকা কাউকে নিতে দেখা যাচ্ছে না বলেও এলাকার সাধারণ জনগণ দাবি তোলেন। টাকা উত্তোলন নিয়েও ইন্নছ আলীর ভূমিকা রহস্যজনক বলে জানান নেতাকর্মীসহ স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান আ’লীগের বেশ কিছু স্থানীয় নেতাকর্মীদের ন্যায় ইন্নছ আলীও মোটা অনেকের সুবিধা নিয়ে চলেছেন গুপিরায়ের বাজারের নামে স্কুল মাঠে জমে উঠা গরুর হাট থেকে। স্থানীয়দের ভাষ্য এই হাটের জমা টাকা অসংখ্য প্রতিবাদীর জন্যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আ’লীগ নেতাকর্মীরা ইন্নছ আলীকে টাকার বিনিময়ে ক্যাডার সাজিয়েছে। ইন্নছ আলীর ছেলেরা সাজনপুরের রফিকুল ইসলাম বাচ্চুর ন্যায় একাধিক প্রতিবাদকারীদেরকে গত প্রায় মাস খানেক আগেও দরবার সালিশেই মারধর করেছে বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় বিএনপি নেতা কুদ্দুস ও জসীমসহ অসংখ্য এলাকাবাসী।
আলোচনা রয়েছে এই হাটকে কেন্দ্র করে আর মসজিদ কমিটির সাজানো সভাপতি সেজে ইন্নছ আলী প্রায় সাড়ে ৩শ’ শতাংশের বিশাল পুকুরও লুটেপুটে খাচ্ছেন পেশি শক্তির প্রভাবে। এ নিয়ে গত ২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারিতেও একাধিক পত্রিকায় শীর্ষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রশাসনের কোনই টনিক নড়েনি! এখনো বহাল তবিয়তে। আদালতে এ নিয়ে মামলাও বিদ্যমান রয়েছে। এবার নতুন করে দীর্ঘ সময় পদ হারানো লিঁয়াজোকারী এ নেতা ইউনিয়ন বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক বনে গেছেন।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে রাজনীতিতে আসার আগে ইন্নছ আলী ছিল কেটে খাওয়া লোক। লুটপাটের মাধ্যমে সুবিধা নিয়ে তিনি এখন কোটিপতি। নামে বেনামে বেশ কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অতীতে দুর্নীতি এবং মাস্তানিসহ অসংখ্য মামলা মোকাদ্দমার তথ্যও মিলে অনুসন্ধানের ভিত্তিতে। দুর্নীতি তার একমাত্র উপার্জনের পুঁজি বলেও গুঞ্জন স্থানীয়ভাবে সরব।
জারইতলা ইউনিয়ন বিএনপির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ইন্নছ আলী বলেন, আমি হবিকে মারতে চাইনি। জসীমকে মারতে গিয়ে সে আটকানোর কারণে মার খাইছে। জসীমকে মারার কারণ জানতে চাওয়ার জবাবে তার ইজারাদার হওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলা এবং সাবেক কমিটির লোকদের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণকেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন। এক পর্যায়ে অপরাধ করেছেন বলেও স্বীকার করেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কামরুল ইসলাম এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইন্নছ আলীর এই আচরণ দল কখনো মেনে নেবে না। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন।
নিকলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বদরুল মোমেন মিঠু এই ধরণের ঘটনায় মর্মাহত। গতকাল রাতে খবর পাওয়ার পরপরই সকালে তিনি রোগীকে হাসপাতালে দেখে এসেছেন বলে জানান। সুস্থ হতে সময় লাগবে বলেও উল্লেখ করেন। তাছাড়া ১৪ জানুয়ারির নিকলী উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল পরবর্তীতে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখবেন বলেও জানান।
নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সজিব ঘোষ বিএনপির নেতা হাবিবুর রহমানের সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিন নিজে ঘটনার তদন্তে এসেছেন বলে জানান। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা স্বীকারের পাশাপাশি মামলা নেয়া হবে বলেও জানান।