আমার কাগজ প্রতিবেদক
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাকলগের (পূর্বে আটকে থাকা কার্ড) কারণে প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার আটকে আছে। এতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন লাখো মানুষ।
বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, এই বিলম্বের জন্য কার্ড সরবরাহে চুক্তি করা ভারতীয় কোম্পানি মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) দায়ী। অপরদিকে কোম্পানিটি বলছে, পলিকার্বোনেট কার্ডের সংকটের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।
বিআরটিএর পরিচালক (অপারেশন্স) মীর আহমেদ তরিকুল ওমর জানান, বর্তমানে ৫ লাখ ৬০ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ডের ব্যাকলগ রয়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহে এমএসপি ৩০ হাজারের বেশি কার্ড সরবরাহ করেছে। এরইমধ্যে এমএসপি ৪ লাখ ৭৫ হাজার কার্ডের চালান পেয়েছে। তবে ভারতীয় কোম্পানি কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে কয়েকটি সমস্যার কথা জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- এলসি (লেটার অফ ক্রেডিট) খোলার জটিলতা এবং আবেদনকারীদের ছবির মানের সমস্যা।
তিনি আরও জানান, আমরা কোম্পানিটিকে এক মাসের মধ্যে ব্যাকলগ (মুলতুবি) থাকা সব কার্ড বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি। আমরা স্পষ্টভাবে প্রতিষ্টানটিকে জানিয়েছি, যতদিন ব্যাকলগ কার্ড বিতরণ না হবে, ততদিন কোনো বিল পরিশোধ করা হবে না। আর এক মাসের মধ্যে ব্যাকলগ থাকা সব কার্ড বিতরণের নির্দেশ দিয়েছি।
ভারতীয় কোম্পানি এমএসপির আইটি প্রজেক্ট ম্যানেজার আহমেদ কানি জানান, আমরা ইতোমধ্যে ৪ লাখ কার্ড পেয়েছি এবং অতিরিক্ত ৫ লাখ কার্ডের জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি এবং প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লাইসেন্স প্রিন্ট করছি। এতে ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে ব্যাকলগ দূর হবে।
বিআরটিএ ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণ শুরু করে। এর আগে, ২০০৫ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি রোধে প্লাস্টিক কার্ড চালু করা হয়েছিল। এমএসপির আগে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড একটি ফরাসি কোম্পানির সহযোগিতায় এ কাজটি করত। তবে, ২০১৮ সালে বিআরটিএ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে প্রকল্পটি অচল হয়ে পড়ে। টাইগার আইটি বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছিল।
এরপর বিআরটিএ নতুন ঠিকাদার খুঁজতে শুরু করে, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় দেড় বছর সময় লেগে যায়। অবশেষে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স (এমএসপি) ২০১৯ সালে স্মার্ট কার্ড মুদ্রণের কার্যাদেশ পায় এবং বাংলাদেশে একটি কারখানা স্থাপন করে।
এদিকে, স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স বিতরণের জন্য মুলতুবি থাকা কার্ডগুলো মুদ্রণের লক্ষ্যে বিআরটিএ ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)-এর সঙ্গে একটি পৃথক চুক্তি স্বাক্ষর করে। এমএসপি কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত সেনাবাহিনী পরিচালিত এ কারখানাটি পূর্ববর্তী ঠিকাদার টাইগার আইটির রেখে যাওয়া ব্যাকলগ পরিষ্কার করে ১২ লাখ ৫০ হাজার কার্ড সরবরাহ করে।