আমার কাগজ প্রতিনিধি
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) প্রায় সাড়ে চার মাস অনেকটা স্থবির থাকার পরে সংস্কারের বড় কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, আমি এবং কমিশনের সদস্যরা সকাল-সন্ধ্যা অবিরাম কাজ করছি। ভালো কিছুর জন্য আমরা সবাই মিলে কাজ করছি।
যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছে
৪৪তম বিসিএসে আগের মৌখিক পরীক্ষা বাদ দিয়ে নতুন করে এই ভাইভা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার সরকারি কর্ম কমিশন এ সিদ্ধান্ত নেয়। ভাইভা শুরু হবে ২২ ডিসেম্বর থেকে। এর আগে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মধ্যে ৩ হাজার ৯৩০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এরপর গত ২৫ আগস্ট এই মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে ৮ অক্টোবর তৎকালীন কমিশন পদত্যাগ করে। আগের কমিশনের নেওয়া ৪৪তম বিসিএসের ৩ হাজার ৯৩০ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এখন এই বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থী অর্থাৎ ১১ হাজার ৭৩২ প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নতুন করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নতুন কমিশন।
৪৫তম বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে পিএসসির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলমান এবং দ্বিতীয় পরীক্ষক কর্তৃক মূল্যায়নের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখার স্বার্থে নতুন কমিশন সব উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কারণ জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষের খাতার মধ্যে ২০ শতাংশ বা এর অধিক নম্বরের পার্থক্য থাকলে তা নিয়ম অনুসারে তৃতীয় পরীক্ষককে দিয়ে দেখিয়ে চূড়ান্ত করা হয়।
এদিকে ৪৬তম বিসিএস প্রিলিমিনারি ফলাফল আবার নতুন করে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১ হাজার ৩৯৭ জন। আগের ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীর সঙ্গে নতুন করে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ পেলেন ১০ হাজার ৭৫৯ জন প্রার্থী। এ–সংক্রান্ত পিএসসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা এবং ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ২১ হাজার ৩৯৭ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য সাময়িকভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে পিএসসি জানায়, সাময়িকভাবে যোগ্য কোনো প্রার্থীর নির্ধারিত শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ডকুমেন্টস/সনদ/প্রত্যয়ন উপস্থাপন না করলে বা প্রতারণার আশ্রয় নিলে, কোনো ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে বা প্রয়োজনীয় তথ্য গোপন করলে বা কোনো জাল সার্টিফিকেট উপস্থাপন করলে বা বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা- সংক্রান্ত সার্টিফিকেটের কোনো অংশ টেম্পারিং বা পরিবর্তন করলে এবং আবেদনপত্রে গুরুতর কোনো ত্রুটি বা ঘাটতি পাওয়া গেলে লিখিত পরীক্ষার পূর্বে বা পরে যেকোনো পর্যায়ে বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হবে।
ভাইভায় নম্বর কমছে
বিসিএসে প্রিলিমিনারির পরে লিখিত, এরপরে হয় মৌখিক পরীক্ষা। এ পরীক্ষা ২০০ নম্বরের হয়। পিএসসি চায় এ নম্বর ১০০ করতে। সে ক্ষেত্রে বিসিএসের মোট ১১০০ নম্বরের পরিবর্তে নম্বর হবে ১০০০। পিএসসির পক্ষ থেকে এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, এ প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে, ৪৪তম বিসিএস থেকেই এটি কার্যকর হবে।
আবেদন ফি কমানোর উদ্যোগ
জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মানসুর হোসেন জানান, ৪৭তম বিসিএসের আবেদন ফি অর্ধেক করার পিএসসির প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হছে, আবেদন ফি ৭০০ টাকার অর্ধেক (৩৫০) করা যায়। এরপর গতকাল ধবার সচিব কমিটি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিসিএসসহ সব সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি ২০০ টাকা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন শিগগিরই জারি করা হবে।
চাকরির বয়স ৩২-এর মধ্যে যতবারই ইচ্ছা ততবার বিসিএস
পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বয়স ৩২ পর্যন্ত একজন প্রার্থী চারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে প্রার্থীদের চাকরির আবেদনের বয়সসীমা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুযোগ দিতে চায় পিএসসি। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।