
আমার কাগজ ডেস্ক
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছর এবং তারচেয়ে কম বয়সী শিশু ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে অস্ট্রেলিয়া। বুধবার দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস হয়েছে। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হবে আইনটি।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ায় কেবল তারাই টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক, রেড্ডিট এবং এক্সসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে, যাদের বয়স ১৭ বছর বা তারচেয়ে বেশি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনে। যদি কোনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, সেক্ষেত্রে ওই যোগাযোগমাধ্যমকে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩৮১ কোটি ৫৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা) জরিমানা দিতে হবে সরকারকে।
সিনেটে উত্থাপনের আগে অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে তোলা হয়েছিল বিলটি। সেখানেও বিপুল ভোটে পাস হয়েছে সেটি।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই এ বিল নিয়ে আলোচনা চলছিল অস্ট্রেলিয়ায়। সিনেট সবুজ সংকেত দেওয়ার পর নতুন এই আইনকে ‘মাইলফলক সিদ্ধান্ত’ বলেও উল্লেখ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো।
বিল পাসের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, “আমরা চাই অস্ট্রেলিয়ার শিশুরা তাদের শৈশব ফিরে পাক এবং বাবা-মা-অভিভাবকরা জানুক যে সরকার তাদের পাশে রয়েছে। এটি একটি ল্যান্ডমার্ক সংস্কার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কবল থেকে আমাদের শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং তাদের ভালো থাকা নিশ্চিত করার জন্য এ আইনটি জরুরি।
“আমি জানি যে আইন পাস এবং নিষেধ সত্ত্বেও কিছুসংখ্যক শিশু ফাঁকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের চেষ্টা করবে। সেক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জবাবদিহিতার আওতায় আনব। এজন্যই জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো অবশ্য সরকারের এ সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি। এক বিবৃতিতে ফেসবুকের মালিক সংস্থা মেটা বলেছে, “অস্ট্রেলিয়ার সরকার তড়িঘড়ি এই আইন প্রণয়ন করেছে। আরেকটু সময় নিয়ে বিষয়টি পর্যালোচনা করা দরকার ছিল। ফেসবুক এমনিতেই বয়সের দিকটি নজরে রাখে। কোন বয়সের মানুষ কী ধরনের ফিড দেখতে পাবেন, সেদিকে নজর রাখা হয়।”
স্ন্যাপচ্যাট বলেছে, “আইনটি যুক্তিসংগত নয়। আইনের মধ্যে বহু ফাঁক থেকে গেছে। এবং পুরো বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কীভাবে এই আইন কাজ করবে তা-ও স্পষ্ট নয়। স্ন্যাপচ্যাটের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তারা এবিষয়ে কথা বলবে এবং একটি ভারসাম্য তৈরি করার চেষ্টা করবে।”
টিকটকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এই আইনটি নিয়ে অত্যন্ত হতাশ। এর ফলে শিশু এবং কিশোররা ডার্ক ওয়েভের দিকে ঢুকে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ডার্ক ওয়েভে অপরাধমূলক কাজ হয়। সোশ্যাল মিডিয়া না থাকলে শিশু-কিশোরদের অপরাধমূলক সাইটে ঢোকার প্রবণতা বাড়তে পারে।