আমার কাগজ প্রতিবেদক
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় আরও শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশে সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ও জনতার গণপিটুনিতে ১১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাজধানীতে ৪৯ জন ও বিভিন্ন জেলায় ৬৩ জন রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে হবিগঞ্জে ৬, রাজশাহীতে ৬, কুষ্টিয়ায় ৭, চুয়াডাঙ্গায় ৪, যশোরে ৮, মানিকগঞ্জে ২, শ্রীপুরে ৬, সাভারে ৯, বরিশালে ৩, কুমিল্লায় ২, লোহাগড়ায় ২, ঝিনাইদহে ৪, চাঁদপুরে ২, কয়রাতে ১ ও সুনামগঞ্জে ১ জন রয়েছেন।
ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল (ঢামেক) পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া নিহত ৪০ জনের তালিকা নিশ্চিত করেছেন। বাচ্চু মিয়া জানান, সোমবার সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, বংশাল, কাজলা, ধনিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩৯৭ জনসহ আহত হলে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।এরমধ্যে ৭১ জনকে ভর্তি দে্ওয়া হয়েছে। এবং জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ৪০ জনকে মৃত ঘোষণা করেছেন। আহত অবস্থায় এবং গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এখনও অনেককে আনা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭ জন নিহত এবং অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক যুবক। রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে পুলিশ ও ছাত্রলীগ। এ সময় ৬ জন নিহত হন। সাভারে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি করলে ৯ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অর্ধশতাধিক লোক বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে বিজিবির গুলিতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। যশোরে হোটেল জাবের ইন্টারন্যাশনালের অগ্নিকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৮ জন পুড়ে মারা গেছে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানায় হামলা চালিয়েছে ছাত্র-জনতা। এসময় দুজন পুলিশ সদস্য মারা যান। কুমিল্লা নগরীতে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় নাফিজুল আলম সামি নামের এক কলেজছাত্রসহ ২ জন নিহত হয়েছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় পোড়াহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম হিরণ (৭৫) নিহত হয়েছেন। এ সময় জনতার গণপিটুনিতে হিরণের গাড়িচালক আক্তার হোসেন বিকালে নিহত হন। পুলিশের গুলিতে বৈষ্যমবিরোধী আন্দোলনককরী যুবক রফিকুল ইসলাম চঞ্চল (২৪) মারা গেছেন। এ ছাড়া গুরুতর আহত মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপু মারা গেছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের সিনেমা হল পাড়ায় জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলমের বাড়িতে দেওয়া আগুনে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। চাঁদপুরে গণপিটুনিতে মারা গেছেন শাপলা মিডিয়ার কর্ণধার-প্রযোজক সেলিম খান ও তার ছেলে নায়ক শান্ত খান। এদিকে শ্রীমঙ্গলে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।