আমার কাগজ প্রতিবেদক
ব্লকেড কর্মসূচির নামে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইনে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
বুধবারআপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না। এজন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজও বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে আবার ব্লকেড কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার কথা রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ: মহিদ উদ্দিন বলেন, কোটা নিয়ে গতকাল বুধবার আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সে প্রেক্ষিতে আর কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোনও অবকাশ নেই। আমরা অনুরোধ করব, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আর নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেবেন না, অন্তত এই চার সপ্তাহ। এরপরেও যদি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।
‘গতকাল কিন্তু আমাদের হাইকোর্টের আপিল বিভাগ স্পষ্ট করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বলবৎ রেখে চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ প্রদান করেছে। যার প্রেক্ষিতে আজকে বা এই চার সপ্তাহ ২০১৮ সালের পরিপত্র বলবৎ হয়েছে। সে কারণেই একত্রিত হয়ে ছাত্রদের জনদুর্ভোগ তৈরির কোনো অবকাশ আছে বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মনে করে না। আমাদের পক্ষ থেকে অবশ্যই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা আছে। সেই সঙ্গে আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের দেশের প্রচলিত আইন আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য। সেই জায়গা থেকে ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু শিক্ষিত আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ করব, তারা যেন মানুষের দুর্ভোগ হয় এমন কর্মসূচি না দেয়।’-যোগ করেন খ. মহিদ উদ্দিন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত এই কমিশনার আরও বলেন, ‘আমাদের জানামতে গতকাল ছাত্ররা ২১টি পয়েন্টে ছিল। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি। ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরেও নগরবাসীর চলাফেরার স্বাধীনতা বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমরা বাধ্য। যেহেতু বিষয়টা সেটেল হয়ে গেছে, সে কারণে ফারদার যেনো কর্মসূচি দিয়ে জনদুর্ভোগ তৈরি না করা হয় আমরা সেই আশা করছি।’
মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, যেহেতু আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছে, সেজন্য তাদের বলব তারা যেন ওই ধরনের কর্মসূচি আর কন্টিনিউ না করে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা ও ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করি তারা শ্রদ্ধাশীল থেকে আর কোনো কর্মসূচি দেবে না। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে ঢাকায় এসএসসি পরীক্ষা চলছে।
সড়ক বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করা আইনানুযায়ী অপরাধ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন যদি রাস্তা বন্ধ হয় এটা দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তা কমপ্লিটলি ওফেন্স। তারা (শিক্ষার্থীরা) ওফেন্স করবে না বলে আমরা আশা করি। গত ১০ দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে পুলিশ এমন কোনো আচরণ করেনি যা পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। সেই সম্মানবোধ যেহেতু তাদের প্রতি আমাদের আছে সেহেতু তারা আমাদের প্রতি, আইনের প্রতি, নগরবাসীর প্রতি বিশ্বাস ও সম্মানটুকু দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘তাদের প্রতি আমাদের পেশাদারিত্বের যে অ্যাপ্রোচ সেটি ছিল এবং সেটি আমরা পরবর্তীতেও রাখতে চাই। আমরা আশা করি তাদের জায়গা থেকেও তারা অনুধাবন করবে।’