আমার কাগজ প্রতিবেদক
প্রবাদ আছে বই কিনে কেউ কখনো দেউলিয়া হয় না। বই অজানাকে জানায়, অচেনাকে চেনায় এবং অদেখাকে দেখায়। এক কথায় বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ বাসযোগে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমন করেন। এর ফলে কাউন্টারে বাসের জন্য যাত্রীগণের অপেক্ষা করা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। যাত্রা পথে অপেক্ষমান সময়টুকু অত্যন্ত বিরক্তিকর হয়ে থাকে, বই পড়ে সেই অবসর সময়কে কাজে লাগানো যায়।
এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের ২নং গেইটের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত গ্রীণ লাইন বাস কাউন্টারের অভ্যন্তরে ডিএমপির ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের সহযোগিতায় ও স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটি মিনি ‘অবসর পাঠাগার’ উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, বিপিএম-বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআিইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোহাম্মদ মইনুল হাসান পিপিএম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাদা মহিউদ্দিন, মতিঝিল বিভাগের এডিসি (ট্রাফিক) মোল্লা তবিবুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা।
এছাড়া স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের সাইদ সেলিম, সাফায়েত রায়হান শিহাব, আজাদ মাহমুদ, মো: আলাউল খালিদ, আবু হানিফ, ইন্দ্রজিৎ,মো. আরিফ হোসাইন, মো. সাব্বির হোসেন, মোঃ আবু নাঈম সরকার, সোহান, কৃষ্ণ দাসসহ গ্রীণ লাইন পরিবহনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) হাফিজ আক্তার বলেন, বর্তমান তরুণ সমাজ অনেকটা বইবিমুখ হয়ে গেছে। তাদের একটা অংশ মোবাইল ও মাদকে আসক্ত হয়ে গেছে। এই সময়ে স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন এর এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ বর্তমান তরুণ সমাজকে বইমুখী করার পাশাপাশি মাদকাসক্তি ও মোবাইল আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনবে। তারা ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ পরিসরে এমন আয়োজন অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
মতিঝিল ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআিইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) মোহাম্মদ মইনুল হাসান বলেন, বাস কাউন্টারে অপেক্ষার সময়ে সেবাপ্রার্থীরা বই পড়লে সমাজ বইমুখী হতে পারে। যে সমাজে বইয়ের কদর যত বেশি সে সমাজ তত সমৃদ্ধ। ইলেকট্রনিক এ গ্যাজেটের যুগে বই হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী।
স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও পাঠাগার অপারেশন টিমের চীফ কো-অর্ডিনেটর সাফায়েত রায়হান শিহাব বলেন, কাউন্টারে বাসের জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়। এই সময়টা বই পড়ে কাটানো যায়। এই চিন্তা থেকে অপেক্ষমান যাত্রীদের জন্য বই পড়ার সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। অবসরকালীন এ সময়টা মোবাইল ফোনে বিভিন্ন চ্যাটিং কিংবা ব্রাউজিং না করে কিংবা অন্য কোনোভাবে সময় নষ্ট না করে যদি বই পড়ে কাটানো যায় তবে মূল্যবান সময়টুকু স্বার্থক হবে।
গ্রীণ লাইন কাউন্টারের অভ্যন্তরে বাসের জন্য অপেক্ষামান উপস্থিত সাধারণ যাত্রীগণ এ ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয়, এ সময় অপেক্ষমান যাত্রী ভারতের জনৈক নাগরিক চন্দ্রিমা দত্ত স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে এ মিনি লাইব্রেরীর সামনে এসে তার ইতিবাচক অভিব্যক্তি তুলে ধরেন। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের আমন্ত্রণে ঢাকা কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ করতে আসাম থেকে এসেছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশের এ কার্যক্রমকে তিনি স্বাগত জানান। এ সময় যাত্রী সাধারণের মধ্যে উপস্থিত কিছু কোমলমতি শিশু মিনি লাইব্রেরী থেকে বই হাতে তুলে নেন এবং পড়েন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু স্বপ্নযাত্রী ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ‘অবসরে বই পড়ি, আলোকিত মানুষ হই’ শ্লোগান নিয়ে এ সংগঠনের এটি ১৪তম ‘অবসর পাঠাগার’।