আমার কাগজ ডেস্ক
৩৫০ সিসির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল রাস্তায় চলাচলের অনুমতির আগে দক্ষ চালক তৈরি করে লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)এর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. শাহবাজ হোসাইন খান, অ্যাডভোকেট শারমিনা হক ও ব্যারিস্টার সৈয়দ তাজরুল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান।
‘মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার দেশে’ শিরোনামে গত বছরের ১৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিক প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন গত রোববার ৮ অক্টোবর এ রিটটি করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে শেরপুর জেলা শহর থেকে সদর উপজেলার হালগড়া চকবড়ইগাছিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন বিজিবির সদস্য মো. ইউসুফ জামিল (২৬)। পথে আমতলী সেতুর ওপর পৌঁছালে তিনি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন তিনি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮.৪ জন। তাদের প্রায় ৪০ শতাংশেরই বয়স ২৪ থেকে ৩০ বছর। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ। যদিও মাথাপিছু মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সবার পেছনে।
তিনি বলেন, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেশি। সড়কে যতো দুর্ঘটনা ঘটে তার মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেশি। আমাদের এখানে যে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়, যতো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসির মোটর সাইকেলই হোক সেটা দিয়ে চালানো যায়। কিন্তু সারা দুনিয়ার অন্যান্য রাষ্ট্রে দেখা গেছে যে মোটরসাইকেলের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্যাটাগরি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গিয়ে ভিন্ন ট্রেনিং নিতে হয়, অভিজ্ঞতা লাগে। তারপরে গিয়ে হাই সিসির মোটরসাইকেল চালাতে পারে। আমাদের দেশে এমনিতেই দুর্ঘটনা বেশি, তার পরে যদি হাইয়ার ক্যাপাসিটির মোটরসাইকেল রাস্তায় আসে তা হলে তো পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। সে জন্যে আমরা বন্ধ করতে না, চাচ্ছি পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইসেন্স নেওয়ার। সারা দুনিয়াতে আছে আমাদের এখানেও থাকুক। তবে যাতে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
আইনজীবী সৈয়দ তাজরুল হোসেন বলেন, দেশে ৩৫০ সিসির মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সারা দেশে দুর্ঘটনার ৪০ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বলে পত্রিকায় এসেছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ। যে কারণে ১৬৫ সিসির ওপরে মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি দেওয়ার আগে দুর্ঘটনা এড়াতে বৃহত্তর স্বার্থে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে কঠোর শর্ত প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন জরুরি।