আমার কাগজ প্রতিবেদক
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর অনন্য আন্তরিকতা দেখলো বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাষা অনুবাদ যন্ত্র নিজেই এগিয়ে দেন তিনি।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে শেখ হাসিনা ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে আসেন। যৌথ বিবৃতিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট তার নিজ ভাষায় সাংবাদিকদের সামনে কথা বলা শুরু করেন।
কথা বলা শুরুর এক ফাঁকে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমার ভাষা বুঝতে পারছেন না; এ কথা বলেই তিনি ভাষা অনুবাদ যন্ত্রটি অন্য টেবিল থেকে এনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে দেন।এরপর বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে দেশটির সঙ্গে কাজ করতে চায় ফ্রান্স; সেই লক্ষেই বিদ্যুৎ, স্যাটেলাইটসহ প্রযুক্তিখাতেও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক দুই দেশের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে৷
এর আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান ম্যাক্রোঁ। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের টাইগারগেটে ম্যাক্রোঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা৷
ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে৷ বাংলাদেশ-ফ্রান্সের নতুন কৌশলগত অগ্রযাত্রা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকরি ভূমিকা রাখবে৷ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ফ্রান্সের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে৷
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকাণ্ডে সন্তোষ জানিয়েছে ফ্রান্স৷
এর আগে স্থানীয় সরকার বিভাগে অবকাঠামো উন্নয়নে ঋণ সহায়তার চুক্তি এবং বঙ্গবন্ধু-২ আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট সিস্টেমের সহযোগিতায় একটি লেটার অব ইনটেন্টে স্বাক্ষর করেছে ঢাকা-প্যারিস৷ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সামনে এটি করা হয়। এরপর তারা দ্বিপাক্ষীয় বৈঠকে বসেন।
এর আগে সকালে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সেখানে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানাসহ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের কর্মকর্তারা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর জাদুঘর পরিদর্শন করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট৷
গতকাল রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে ম্যাক্রোঁকে বহনকারী বিমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে তাকে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। ম্যাক্রোঁর সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় এসেছেন ফ্রান্সের ইউরোপ ও পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনা। এরপর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ফরাসি প্রেসিডেন্টের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যরাতে গানের দল ‘জলের গান’-এর রাহুল আনন্দের ধানমন্ডির বাসার নিজস্ব স্টুডিওতে যান ম্যাক্রোঁ।
বিগত ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ৩৩ বছর পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে এলেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে ম্যাক্রোঁর। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।