আমার কাগজ প্রতিনিধি
ফেনীতে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ
অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও ফেনী জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন ।
ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় নাজমুন নাহার (৭৫) নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন নিহতের ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী বিপ্লব। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেনী জেলার পুলিশ সুপার ও রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত বারডেম হাসপাতালের পরিচালককেও আবেদনের অনুলিপি দিয়েছেন অভিযোগকারী।
গত ২৫ জুলাই দেয়া এই আবেদনে অভিযোগকারী ফেনীর দাগনভূঞার রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হক চৌধুরী উল্লেখ করেছেন, তার মা নাজমুন নাহার (৭৫) একজন বয়োবৃদ্ধ মহিলা। শারীরিক অসুস্থতা বোধ করায় গত ১ জুলাই বিকেলের দিকে ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। সেখানে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরতরা তাৎক্ষণিক তার মায়ের ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করে স্বাভাবিক দেখতে পান। তবে কয়েক মিনিট পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. ফজলুল ওহাব চৌধুরী তার মাকে দেখে বলেন, ‘রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল। নিউমোনিয়া হয়েছে। হাসাপাতালে ভর্তি করাতে হবে’। ভর্তির পরপরই অভিযোগকারী মাকে সিসিইউতে নেয়া হয়। এ অবস্থায় তারা ভাই-বোন ও স্বজনরা হাসপাতালে অবস্থান করতে থাকেন।
সিসিইউতে নেয়ার পর একজন ব্রাদার এসে তাদের জানান, রোগীর অবস্থা খারাপ। অক্সিজেন লেভেল ওঠা-নামা করছে। এ কথা শুনে পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা ঘাবড়ে যান। কেননা, আগে কখনো রোগীর শ্বাসকষ্ট ছিল না। তাছাড়া চিকিৎসক এবং হাসপাতালের লোকজন অক্সিজেন সমস্যার কথা বললেও রোগীকে দেখে তার প্রমাণ মিলেনি। বরং রোগীকে অনেকটা স্বাভাবিক মনে হয়েছে।
গত ২ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকেই রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ নিয়ে চিকিৎসক-ব্রাদারদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা রোগীর স্বজনদের অপেশাদারসুলভ আচরণ করতে থাকেন। ফলে রোগীর পরিবার ও স্বজনরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অনেক পীড়াপীড়িতেও কেউ কোন সদুত্তর দেননি। বরং ওইদিন দিবাগত রাত ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক লোক দিয়ে রোগীর ছোট ছেলে কামরুল হক চৌধুরী ওরফে জামানকে তার কক্ষে ডেকে নেন। সেখানে গিয়ে অপর দুইজনকে দেখতে পান কামরুল। তারা রোগীর ছোট ছেলের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং বাড়াবাড়ি করলে রোগীকে ডিসচার্জ করে দেয়ার হুমকি দেন। তাদের এমন আচরণে স্বজনরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও রোগীর চিকিৎসার কথা ভেবে ধৈর্য ধরেন। কিন্তু রোগীর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ৩ জুলাই দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি কোমায় চলে যান। পরের দিন সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে তিনি মারা যান।
অভিযোগকারী আবেদনে আরও উল্লেখ করেছেন, পুরো ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের দৃঢ় বিশ্বাস, ওই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে মাফিয়া কারবার চলছে। চিকিৎসকদের যোগসাজশে একটি সিন্ডিকেট রোগীদের জিম্মি করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতে নানা অপকর্ম করছে। রোগী নাজমুন নাহারের চিকিৎসার পুরো বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এটি প্রমাণ হবে বলেও আবেদনে উল্লেখ করেছেন মৃতার ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী বিপ্লব।
নাজমুল হক চৌধুরী বিপ্লব আবেদনে সাধারণ মানুষের নিরাপদ চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত এবং চিকিৎসার নামে অবৈধ ব্যবসা বন্ধে তার অভিযোগটি সুষ্ঠু তদন্ত করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।