
ছবি- সংগৃহীত
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
আজ (৯ আগস্ট) আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে দিবসটি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপনে অরণখোলা ইউনিয়নের ভুটিয়া ও শোলাকুড়ি ইউনিয়নের পীরগাছায় পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
এই দুটি স্থানের অনুষ্ঠানমালায় র্যালি, আলোচনা সভা, আদিবাসীদের জীবনাচরণ সম্বলিত নাচ-গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ভুটিয়ার অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশিদ এবং পীরগাছায় মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলে বসবাসরত ২৫ হাজারের বেশি আদিবাসী এখনও জীবন ধারণের জন্য বনভূমি ও বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। মহান স্বাধীনতার ৫২ বছরেও তারা ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় উচ্ছেদ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছে।
মধুপুরের গারো ও কোচ সম্প্রদায়ের দাবি, মহান স্বাধীনতার ৫২ বছরেও সরকার তাদের ‘আদিবাসী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি। বংশ-পরম্পরায় তারা হাজার বছর যাবত মধুপুর বনাঞ্চলে বসবাস করলেও সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জমির মালিকানা না থাকায় ভূমি হারানোর আতঙ্কে তাদের দিন কাটছে।
তাদের দাবি, মধুপুরের গড়াঞ্চলে যারা হাজার বছর ধরে বসবাস করছেন, তারাই বনের রক্ষক। বন দখলকারীদের সঙ্গে তাদের এক কাতারে ফেলা হচ্ছে।
তাদের এও অভিযোগ, সরকার সামাজিক বনায়ন, খাস সম্পত্তি রক্ষা, ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান, ইকো-পার্ক স্থাপন ও কৃত্রিম লেক তৈরির নামে ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। দাবি আদায়ে তারা বিভিন্ন সময় নানান কর্মসূচি পালন করলেও কোনো সুফল পাচ্ছে না। ফলে এখনও নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ আতঙ্ক তাদের পিছু ছাড়ছে না।
বাংলাদেশ গারো ছাত্র পরিষদের (বাগাছাস) সভাপতি জনজেত্রা জানান, এতদাঞ্চলে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর থেকে বনগুলো সরকার বনভূমি হিসেবে নিয়ন্ত্রণে নেয়। মূলত সে সময় থেকেই তারা বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন; এর ধারাবাহিকতা এখনও চলছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদেরকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও মহান স্বাধীনতার ৫২ বছরেও ‘আদিবাসী’ হিসেবে তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি মেলেনি।
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক জানান, রাষ্ট্র বা সমাজ কতখানি উন্নত, গণতান্ত্রিক বা সভ্য; তা বোঝা যায় সেখানে সংখ্যালঘু মানুষেরা কেমন আছেন, তা বিশ্লেষণ করে। আদিবাসীদের ভূমি অধিকার রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তিনি।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সাইকেল বিতরণ, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নত জীবন ব্যবস্থা চলমান রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল থেকে বিরত থাকার জন্য ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।