আমার কাগজ প্রতিবেদক
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র জমা না দেওয়ায় সারা দেশে ৭৭৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। লাইসেন্স বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনা সরকারের সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালীরা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় অস্ত্রগুলো এখন অবৈধ। এসব অস্ত্র উদ্ধারে সব জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলা হয়েছে। এসব অস্ত্রের বেশির ভাগ ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পাবনা জেলার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, যে ৭৭৮টি অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের মালিক আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে যাওয়ার পর থেকে তারা পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ বিদেশে পালিয়েছেন, কেউ কেউ দেশেই আত্মগোপনে আছেন। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হয়েছে। এ জন্য অনেকে অস্ত্র জমা দেননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে (২০০৯-২০২৪) সারা দেশে ১৯ হাজার ৫৯৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৫ আগস্ট বিগত সরকারের সময় অনুমোদন দেওয়া সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ অস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনেকে অস্ত্র জমা দেননি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ৭৭৮টি অবৈধ অস্ত্র কোথায় আছে, এর মালিকেরা কোথায় আছেন, সেসব তথ্য নেই। অস্ত্র উদ্ধারের তথ্য এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েনি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের গাফিলতি থাকতে পারে। যদিও ৫ আগস্টের পর পুলিশ বিভাগ এখনো পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় অনেক কাজ স্থবির হয়ে আছে বলে জানান এই কর্মকর্তারা।
‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি নিজের লাইসেন্সের বিপরীতে নেওয়া অস্ত্র শুধু আত্মরক্ষার জন্য বহন ও ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যের মধ্যে ভীতি বা বিরক্তি তৈরি হতে পারে, এমন ক্ষেত্রে অস্ত্র প্রদর্শন করা যাবে না। এটি করলে তার অস্ত্রের লাইসেন্স তাৎক্ষণিকভাবে বাতিলযোগ্য হবে।
অথচ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বিভিন্ন সময় বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ও প্রতিপক্ষকে ভয় দেখাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। কখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে পরে সেটিকে বৈধ অস্ত্র বলে দাবি করার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় বেশির ভাগ সময় নিশ্চুপ ছিল জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।