লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় পাঁচ চিকিৎসককে বড় ধরণের অস্ত্রোপচারে (অপারেশন) নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুণময় পোদ্দার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে একই দিন বিকেলে ওই পাঁচ চিকিৎসককে নিষেধাজ্ঞাসহ আটটি নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করেন তিনি।
নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা হলেন, ফারজানা তালুকদার ন্যান্সি, তাওহিদা আক্তার, রাকিবুল হাসান, জান্নাতুল ফেরদাউস ইতি ও মাহবুবা হক মিতু। এরমধ্যে ন্যান্সি ও তাওহীদা রামগঞ্জ আল ফারুক হসপিটাল, হাসান আধুনিক হাসপাতাল, ইতি চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মিতু ফেমাস হাসপাতালের চিকিৎসক।
জানা গেছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ওই পাঁচ চিকিৎসককে বড় ধরণের অস্ত্রোপচার থেকে বিরত থাকার জন্য পরিপত্রের সাত নম্বর নির্দেশনায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া পরিপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএমডিসি স্বীকৃত উচ্চতর ডিগ্রি ব্যতীত কোনো চিকিৎসক বড় ধরণের অপারেশন করতে পারবে না। ন্যূনতম প্রশিক্ষণ না নিয়ে কোনো চিকিৎসক বড় ধরণের অপারেশন করতে পারবেন না। যদি কোনো সনদ মিথ্যা প্রমাণিত হয় উক্ত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কোনো রোগীকে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার পর অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি নিতে হবে। জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হবে।
ফেমাস হসপিটাল ম্যানেজার মানিক দাস বলেন, চিকিৎসক মিতুর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। তবুও তার শিক্ষাগত ও প্রশিক্ষণের সকল সনদপত্র স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে দিয়ে আসা হয়েছে। এরপরও নিষেধাজ্ঞার ঘটনাটি দুঃখজনক।
তবে চেষ্টা করেও নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুণময় পোদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ চিকিৎসককে বড় ধরণের অপারেশন করতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরিপত্র দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা জারি থাকবে। কাগজপত্রবিহীন হাসপাতালগুলোকেও নোটিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগে রামগঞ্জ আল-ফারুক হসপিটালের চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে নাজমা খাতুন (৩৫) নামের এক প্রসূতি ও নবজাতক কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ফারজানা তালুকদার ন্যান্সির ভুল চিকিৎসায় গর্ভে থেকেই নবজাতক কন্যা শিশুর মৃত্যু হয়। আর গত ১৭ জুলাই প্রসূতি নাজমা বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। সেখান থেকে ফিরেই রোগীর স্বজনরা রামগঞ্জের হাসপাতাল ঘেরাও করে চিকিৎসক ন্যান্সির শাস্তির দাবি জানায়। এ ঘটনায় গত ১৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) ডা. নাজমুল হককে সভাপতি ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. সাইফুল আমিন, মেডিকেল অফিসার সাবিহা সুলতানাকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুণময় পোদ্দারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।