
আমার কাগজ প্রতিবেদক
ঢাকার সাবেক বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ বছর আগে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলার বহুল আলোচিত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামির খালাসের রায় বহাল রেখেছে সর্বোচ্চ আদালত।
আসামিদের খালাস দিয়ে হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেয়।
খালাসের রায় বহাল রাখলেও হাই কোর্টের রায়ের একটি অংশ সংশোধন করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, ২১ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। ওই অংশটি বাদ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় জজ আদালত এ মামলায় বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল।
চব্বিশের অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ গতবছর ১ ডিসেম্বর সেই দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল মঞ্জুর করার পাশাপাশি মৃত্যদণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্স) খারিজ করে দেয়।
যারা আপিল করেছেন, তাদের পাশাপাশি যারা করেননি, সবাইকে এ মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয় হাই কোর্টের রায়ে।
আসামিদের সবাই খালাস পাওয়ায় ১ ডিসেম্বর রায়ের দিন অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের প্রশ্ন ছিল, গ্রেনেড হামলায় নিহত ২৪ জনের পরিবার কি তাহলে সুবিচার পাবে না?
সেই প্রশ্নের উত্তর আসে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত ৭৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে।
সেখানে বলা হয়, ২১ অগাস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল দেশের ইতিহাসে ‘একটি জঘন্য ও মর্মান্তিক’ ঘটনা, যেখানে অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আইভী রহমানও ছিলেন।
“নিহতদের আত্মার প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন, যা এ পর্যন্ত এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত রয়েছে।
“এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এই মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত, যাতে সঠিক এবং দক্ষ তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে পুনরায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”
আদালতের রায়ের এই পর্যবেক্ষণের আলোকে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এই আদেশের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়।
হাই কোর্টের রায়ের এই অংশটি চূড়ান্ত বিচারে বাদ দিয়েছে আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্যাহ আল মাহমুদ। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবু সাদাত মো. সায়েম ভূঞা ও সাদিয়া আফরিন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ জজ আদালতের দেওয়া সাজার রায় বহাল রাখার এবং আসামিপক্ষ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ ও হাই কোর্টের রায় বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছিল।
গত ১৭ জুলাই আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৩১ জুলাই, ১৯ অগাস্ট, ২০ ও ২১ অগাস্ট শুনানি হয়। পঞ্চম দিনের শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে দিয়েছিল আপিল বিভাগ।