
আমার কাগজ ডেস্ক
হংকং ২০১৮ সালের বিধ্বংসী মানখুট ঝড়ের পর আবারও সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের হুমকির মুখে পড়েছে। সুপার টাইফুন রাগাসা ফিলিপাইন উপকূল অতিক্রম করে এখন হংকংয়ের দিকে ধেয়ে আসছে। হংকং অবজারভেটরি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৭ মাইল)।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টা পর্যন্ত এটি হংকং থেকে প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। সাফির-সিম্পসন হারিকেন স্কেল অনুযায়ী, এর শক্তি ক্যাটাগরি-৪ মাত্রার সমান।
ঝড়ের কারণে হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে। মঙ্গলবার ও বুধবার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং দক্ষিণ চীনের অন্যান্য এলাকাতেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জিজিন গোল্ড ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) পিছিয়ে যেতে পারে, যা সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের অন্যতম বড় আইপিও হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
হংকং অবজারভেটরি জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকেই আবহাওয়া খারাপ হতে শুরু করবে এবং বুধবার সকালে ঝড়টি পার্ল রিভার মোহনার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করবে। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার সতর্ক করেছে, এই ঘূর্ণিঝড় ভূমিতে আঘাত ছাড়া আর কিছুই থামাতে পারবে না।
হংকংয়ের দক্ষিণ পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় এর প্রভাবে প্রচণ্ড ঝোড়ো হাওয়া ও প্রবল বর্ষণ হতে পারে। ২০১৮ সালের মানখুট ঝড় প্রায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন হংকং ডলার (৫৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছিল। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, রাগাসাও একই ধরনের জলোচ্ছ্বাস ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।
মঙ্গলবার বিকেলে হংকং অবজারভেটরি তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ সতর্কতা সিগন্যাল জারি করার পরিকল্পনা করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অন্তত ৩৬ ঘণ্টার জন্য হংকং থেকে সব যাত্রীবাহী ফ্লাইট স্থগিত থাকবে।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইটগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার নির্ধারিত ১ হাজার ৯৭টি যাত্রীবাহী ও কার্গো ফ্লাইটের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। শেনজেন ও ম্যাকাও বিমানবন্দরও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে এবং চীনের গুয়াংডং প্রদেশে বুধবার থেকে সব রেল পরিষেবা স্থগিত থাকবে। ঝুহাই, জিয়াংমেন এবং ফোশান শহরগুলোতেও স্কুল ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বাসিন্দারা ঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেক দোকানের তাজা সবজি শেষ হয়ে গেছে। রাগাসার প্রভাবে তাইওয়ানে ইতোমধ্যে হাজারো পরিবার বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহরে অফিস ও স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফিলিপাইনের উত্তর লুজন দ্বীপ থেকে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থান করছে এবং দক্ষিণ চীনের উপকূল অতিক্রমের পর এটি ভিয়েতনামের দিকে অগ্রসর হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ভিয়েতনাম ৩ লাখেরও বেশি সামরিক সদস্য, ৮ হাজার যানবাহন এবং ছয়টি বিমান প্রস্তুত রেখেছে।